খুলনা: অর্ধশত শিক্ষার্থীর প্রায় ৫ কোটি টাকা আটকে রেখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নষ্ট করছে খুলনার আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ।
এসব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা ভর্তি ফি নিয়ে ২০১৩-২০১৪ সেশনে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
এর পর প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ না করার অভিযোগে গত ২১ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজসহ দেশের ১২টি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন স্থগিত করে। আর এতেই বিপাকে পড়ে কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ভর্তির পর ৭ মাস অতিবাহিত হলেও শিক্ষার্থীদের টাকা ফেরত কিংবা অন্য কলেজে ভর্তির সুযোগ করে না দেওয়ায় মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কলেজের প্রধান গেট বন্ধ করে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে আগামী ২ আগস্ট পর্যন্ত ঈদের ছুটি ঘোষণা করে এবং বুধবারের মধ্যে হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এই ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
শিক্ষার্থী ফারুক, মামুন, অনিন্দ বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, ৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪২ জন ইতোমধ্যে দুবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এ বছরের ভর্তি পরীক্ষায় তারা আর অংশ নিতে পারবেন না। ফলে সরকারি মেডিকেল কলেজেও আর পড়ালেখার সুযোগ নেই।
শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একাডেমিক কাগজপত্র এবং মোটা অংকের টাকা কলেজে আটকে থাকায় অন্য কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগও শেষ। এ অবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে ২-৪ দিনের মধ্যে অন্য কলেজে স্থানান্তর করার মাধ্যমে শিক্ষাজীবন ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা আরো জানান, ইতোমধ্যে একাধিকবার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েও কথা রাখতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রায় সব মেডিকেল কলেজই শিক্ষার্থীদের অন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ করে দিলেও আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ তা করেনি। বিপাকে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২৩ জন ছাত্র এবং ২৭ জন ছাত্রী।
কলেজকে যদি অনুমোদন দেওয়া না হয় তাহলে দেশের অন্য ২৩টি সরকারি ও ৫৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের কোনো একটিতে তাদের ভর্তি করিয়ে দেওয়া হোক। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে আকিজ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আব্দুর রহমান মঙ্গলবার দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, আকিজ মেডিকেল কলেজসহ দেশের ১২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রাথমিক অনুমোদন গত ২১ জানুয়ারি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রাথমিক অনুমোদনের সব শর্ত পূরণ করেছি। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ৭টি টিম কলেজ পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের টাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনুমোদন পাবো এমন আশায় শিক্ষার্থীদের ধরে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্রে জানায়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রাথমিক অনুমোদনের শর্তানুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠানে ধারণ ক্ষমতার ৭০ শতাংশ সাধারণ এবং ১০ শতাংশ বিনামূল্যের শয্যা থাকতে হবে।
তাছাড়া অ্যানাটমি, ফিজিওলজি এবং বায়োকেমিস্ট্রি অবকাঠামো সুবিধা, নিজস্ব গ্রন্থাগারসহ বেশকিছূ সুবিধা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু নতুন অনুমোদন পাওয়া অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান শর্তের অনেকগুলোই পূরণ করতে পারেনি। যে কারণে ১২টি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৪