রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে আসা এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর নেতৃত্বে সোমবার দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
পরে রাবি ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপে ওই শিক্ষার্থীকে মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে ছেড়ে দিয়েছে অপহরণকারীরা।
ওই শিক্ষার্থীর নাম জুন্নুন ওয়ালিদ বাবু, তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার পাহাড়পুর এলাকায়। বাবু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং করছেন।
অপহরণে নেতৃত্ব দেন রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া (ভাষা, চতুর্থ বর্ষ), ছাত্রলীগ কর্মী তাওশিক তাজ (বাংলা, ১ম বর্ষ), মাহফুজুর রহমান এহসান (ভুগোল, চুতর্থ বর্ষ), সনেট (বাংলা, ১ম বর্ষ) ও তাজের বন্ধু শুভ (বহিরাগত)।
অপহরণের শিকার বাবু বাংলানিউজকে জানান, তার এক বান্ধবী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তার সঙ্গে দেখা করার জন্য সে ও তার বন্ধু সামি রোববার রাজশাহীতে আসে। তারা নগরীর তালাইমারিতে ওই ছাত্রীর বন্ধু সনেটের ছাত্রাবাসে ওঠেন।
সোমবার রাত ১০টার দিকে তালাইমারী থেকে সনেট ও তার বন্ধু ছাত্রলীগ কর্মী তাওশিক তাজ বাবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে নিয়ে আসে। সেখানে হলের একটি কক্ষে তার সঙ্গে কথা বলেন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, ছাত্রলীগ কর্মী তাউসিক তাজ, এহসান ও সনেট।
সেখানে তারা বাবুর সঙ্গে গল্প করতে করতে এক পর্যায়ে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য চাঁদা দাবি করেন। ওই কক্ষে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের পর রাত ১২টার দিকে বাবুকে হলের বাইরে নিয়ে আসে তাজ ও তার বন্ধুরা। হলের পাশে তাকে চড়-থাপ্পর দেয় এবং মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ হিসেবে তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়।
বাবু আরো জানান, রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তাকে কিছুক্ষণ ঘুরানো হয় এবং বিভিন্নভাবে মানসিক নির্যাতন করে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। পরে তাজের কয়েকজন বন্ধু তাকে বিনোদপুর বাজারের একটি গলিতে নিয়ে চোখ বেঁধে ১০-১৫ মিনিট হাঁটিয়ে একটি স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে আটকে রেখে তাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
তার হাতে সিগারেটের ছেকা, লাঠি ও রড দিয়ে মারধর করা হয়। এসময় তার ফোন থেকে তার বন্ধুদের ফোন দিয়ে টাকা চাইতে বাধ্য করা হয়।
পরে সকাল ৮টার দিকে বাবুর ফোন থেকে তার বন্ধু সামিকে ফোন দিয়ে দ্রুত টাকা না দিলে বাবুকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। সামি বিষয়টি বাবুর বান্ধবীকে জানালে সে ক্যাম্পাসে তার পরিচিত কয়েকজনকে জানায়। একপর্যায়ে বিষয়টি জানার পর ছাত্রলীগের কয়েকজন সিনিয়র নেতারা কৌশলে অপহরণকারীদের কাছ থেকে টাকা দেওয়ার জন্য বিকাশ নাম্বার চায়।
ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারা বিষয়টি জানতে পেরেছে বোঝার পর অপহরণকারীরা মোবাইল কেড়ে নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাবুকে ওই বাসা থেকে বের করে নগরীর মির্জাপুর এলাকার একটি ধানক্ষেতে ছেড়ে দেয়। সেখান থেকে বাবু ক্যাম্পাসে চলে আসেন।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ছাত্রলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এর সঙ্গে জড়ানো হয়েছে।
ছাত্রলীগ কর্মী তাওশিক তাজ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।
রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি জানার পর ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারাই ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেছে। এঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
এদিকে এঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে দুই নেতাকে বহিষ্কার করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে সুপারিশ এবং অপর দুই কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর তিনটার দিকে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান রানা এবং সাধারণ সম্পাদক তৌহিদ আল হোসন তুহিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙের অভিযোগে রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, সহসম্পাদক মিজানুর রহমানকে বহিষ্কারের সুপারিশ এবং ছাত্রলীগ কর্মী তাওশিক তাজ ও মাহফুজুর রহমান এহসানকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৪