জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মওলানা ভাসানী হল শাখা ছাত্রলীগের এক পক্ষের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় হলে তল্লাশি চালিয়ে কিছু দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তবে হামলাকারীদের কাউকেই পুলিশ আটক করেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ভোররাত সাড়ে চারটায় ছাত্রলীগ মওলানা ভাসানী হল শাখার সভাপতি ফয়সাল আহমেদ শাকিল গ্রুপের সাত নেতাকর্মীকে কুপিয়ে আহত করেন সাধারণ সম্পাদক অনিন্দ বাড়ৈ গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
এ হামলায় অন্য হলের ছাত্রলীগ কর্মীরাও অংশ নেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ হামলার ঘটনায় আহতরা হলেন- হল শাখার সভাপতি ফয়সাল আহমেদ শাকিল (সরকার ও রাজনীতি), বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির (ভূগোল ও পরিবেশ), উপমানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক ফিরোজুর রহমান (বাংলা), কার্যকরী সদস্য রোকনুজ্জামান (ভূগোল ও পরিবেশ, মেহেদী রোমান (আইটি), কর্মী সাইফুল (ভূগোল ও পরিবেশ), আরিফুল ইসলাম (ভূগোল ও পরিবেশ)।
এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেলের অনুসারী।
এদিকে, আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গুরুতর আহত ফয়সাল আহমেদ শাকিলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অপরদিকে, হামলাকারীরা হলেন- ছাত্রলীগের মওলানা ভাসানী হল শাখার সাধারণ সম্পাদক অনিন্দ বাড়ৈ (নৃবিজ্ঞান), বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক কে.এম. নুরুন নবী (জেনেটিকস), ছাত্রলীগ কর্মী সুজন (পদার্থ), বায়েজিদ (পদার্থ), কিশোর (পদার্থ), সাদ্দাম (উদ্ভিদবিদ্যা), নাইম (মার্কেটিং), সঞ্জয় (ইতিহাস)।
এদের মধ্যে সঞ্জয় মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থী। হামলাকারীরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনির অনুসারী।
হামলার ঘটনায় প্রায় ১২ ঘণ্টা পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ নিয়ে মওলানা ভাসানী হল তল্লাশি করে। সাভার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিমের নেতৃত্বে হল তল্লাশি করে পুলিশ কিছু দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করলেও হামলাকারী কাউকেই আটক করেনি।
এদিকে, হলের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, হলের মেঘনা হাউজের তিনতলায় প্রায় ১৭ কক্ষের দরজা, জানালার কাচে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ভাঙচুর করা কক্ষের প্রতিটি লকারের তালা ভাঙা।
হামলাযর শিকার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ভাঙচুর করা কক্ষগুলিতে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ লুট করেছে হামলাকারীরা।
অপরদিকে, হামলাকারীরা দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা হলের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে রাখায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে হলে প্রবেশ করতে এবং বের হতে পারেননি। ফলে, অনেকেই নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে পারেননি এবং খাবারও গ্রহণ করতে পারেননি।
এদিকে, হল তল্লাশি শেষে হামলাকারীরা আবার হলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে, হামলার শিকার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করতে পারছেন না। ঘটনার কোনো সুরাহা না করেই স্থান ত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রক্টরিয়াল বডি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, আমরা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। হল প্রাধ্যক্ষ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দেবে এবং আমরাও কিছু তথ্য পেয়েছি। রাতেই আমরা বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করবো।
আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, সন্ধ্যার পর কেন্দ্রীয় দফতরে সভা হবে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল বলেন, ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারই বহির্প্রকাশ আজকের এই ঘটনা। তবে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সাভার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজিম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
**আট ঘণ্টা পরও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন!
বাংলাদেশ সময়: ২১০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৪