ঢাকা: সেরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে উচ্চশিক্ষার এক বিরাট সম্ভাবনাময় খাত উল্লেখ করে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা ও মুনাফার চিন্তা ত্যাগ করে জনকল্যাণ, সেবার মনোভাব ও শিক্ষার জন্য অবদান রাখার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি) এর ১৬তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ আহবান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আইইউবি’র ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশি শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। বর্তমানে এক হাজার ৬৩০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ব্যবসা ও মুনাফার চিন্তা ত্যাগ করে জনকল্যাণে, সেবার মনোভাব ও শিক্ষার জন্য অবদান রাখার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি। যারা ব্যবসা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে স্বার্থ হাসিল করতে চান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের মাধ্যমে তাদের পথও রুদ্ধ করা হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সফলতার স্বার্থে সে আইন মেনে চলারও আহবান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত ও মান উন্নয়ন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে দায়িত্বশীল দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত, জ্ঞানী, বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে দক্ষ, সৎ এবং নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
যুগোপযোগী এবং সমসাময়িক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে আইইউবি দক্ষ ও সুযোগ্য শিক্ষক মণ্ডলীর মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ায় শিক্ষামন্ত্রী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
আইইউবি শুরু থেকে অব্যাহত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ক্রমাগত মান বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি আশাবাদী এ বিশ্ববিদ্যালয় আরো সফলতার দিকে যাবে।
সমাবর্তনে স্নাতক পর্যায়ে ৭২৯ জন এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৪৩৪ জনসহ মোট এক হাজার ১৬৩ জন শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করেন।
গ্রাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বাস্তবের যুগশ্রষ্টা। আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা জীবন শেষে আপনাদের কর্মজীবন শুরু হলো। অর্জিত শিক্ষা ও জ্ঞান বাস্তব কর্মজীবনে প্রয়োগ করতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণ তথা গ্রাজুয়েটদের প্রতি আহবান জানান মন্ত্রী।
শিক্ষার মূল লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বমানের শিক্ষা ও জ্ঞান-প্রযুক্তির পাশাপাশি নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিপূর্ণ মানুষ তৈরি করাও আমাদের লক্ষ্য।
এজন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থিতিশীল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বহুমাত্রিক শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত করার যথোপযুক্ত পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও নতুন জ্ঞান অনুসন্ধানে জোর দেওয়ারও আহবান জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিষয় বাছাই, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, শিক্ষাদানের পদ্ধতি অব্যাহতভাবে উন্নয়ন করতে হবে।
সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করি না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলবো, আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে ভর্তি ও টিউশন ফি ও সকল ব্যয় একটি সীমা পর্যন্ত নির্ধারিত রাখুন।
শিক্ষা জীবনে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরুপ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক পেয়েছেন স্নাতক পর্যায়ে মাইশা আয়েশা এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে তানজিনা আহমেদ চৌধুরী, রাজিবুল হাসান, আলী আশরাফ মোল্লা, আজমিনা পানজাওয়ানী এবং নাবিলা রহমান। শিক্ষামন্ত্রী তাদের পদক প্রদান করেন।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মাইশা আয়েশা সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এ সমাবর্তনের ‘ভ্যালিডিকটরিয়ান’ হবার সম্মান অর্জন করেন।
সমাবর্তন উপলক্ষে বর্ণিল করে সাজানো হয় আইইউবি ক্যাম্পাস।
সমাবর্তনের বিশেষ পোশাক ‘কস্টিউমস’ পরা গ্রাজুয়েটদের উপস্থিতি ছাড়াও আইইউবির শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের পদচারণায় সকাল থেকেই মুখরিত হয়ে উঠেছে এ ক্যাম্পাস।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও আইইউবির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. এ মজিদ খান সমাবর্তনে বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন।
অন্যান্যের মধ্যে আইইউবি’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান রাশেদ চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাকালীন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সাইফুর রহমান এবং উপাচার্য অধ্যাপক ওমর রহমান বক্তব্য রাখবেন।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোনীত উপাচার্য অধ্যাপক মিলান পাগন।
শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন ৮৩ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া, আইইউবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা, সমাজ সেবা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও সব্যসাচী শিক্ষার্থী শ্রেণিতে পুরস্কৃত করা হয়।
মিডিয়া ও কমিউনিকেশন বিভাগের শিক্ষার্থী সাবানাজ রশীদ দিয়া ও মারুফা মাহানাজ চেতনা এবং ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী এস কে হাশমী রাফসানজানি আইইউবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৪