ঢাকা: সরকারি কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইউজিসির এ মতের সম্পূর্ণ ভিন্ন মত প্রকাশ করে দেশের সবচেয়ে বড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মনে করে সেশনজট নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যে সমালোচনা তা কাটিয়ে এক বছরে শূন্যের কোঠায় আসবে।
ইউজিসি চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী) অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে বলেন, সরকারি কলেজগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে একদিকে কলেজগুলোতে সেশনজট আরও বেড়েছে, অন্যদিকে শিক্ষার মান কমতে শুরু করেছে
প্রধানমন্ত্রী গত ৩১ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পরিদর্শনে গিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত সরকারি কলেজগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেওয়ার নির্দেশনা দেন। সেশনজট কমাতেই এ উদ্যোগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি কলেজগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ন্যস্ত করার লক্ষ্যে ৭ ডিসেম্বর ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে নিয়ে সভা করে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করে ইউজিসি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের সেশনজট ও শিক্ষার গুণগতমান উন্নীতকল্পে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে কমিটি গঠিত কমটিকে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
এ নির্দেশনার মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক দিনে পরোক্ষভাবে বিরোধীতা করে সংবাদ সম্মেলন এবং সরকারি কলেজের অধ্যক্ষদের নিয়ে সভা করে। অধ্যক্ষরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে সহায়তার আশ্বাস দেন।
কিন্তু পূর্ব নির্ধারিত বিশেষ সিনেট অধিবেশনে বক্তব্যকালে শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সদস্য অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকারি কলেজগুলো কেড়ে নেওয়ার পাঁয়তারা চলছে।
প্রাক্তন চিফ হুইপ সংসদ সদস্য আব্দুস শহিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীর, বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক শামসুজ্জামান, শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক অহিদুজ্জামান, সিরাজউদ্দিনসহ বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনার, শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা সরকারি কলেজগুলো কেড়ে না নিয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো উন্নয়নের উপর জোর দেন।
চট্টগ্রামে ইউজিসি চেয়ারম্যানের দেওয়া বক্তব্য, এখন শিক্ষার্থীরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে সংকোচ বোধ করেন- এর সমালোচনাও করা হয়।
১৯৯২ সালে সরকারি কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দেওয়ার ২২ বছর পর আবারো সিদ্ধান্ত বদল করা হলে ২১ লাখ শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি সিস্টেম ব্যাঘাত ঘটবে বলে মনে করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট। তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো গতিশীল করার উদ্যোগের কথা জানান।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেট-সিন্ডিকেটে প্রস্তাব পাসের পর সরকারি কলেজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া, সেশনজট নিরসনের আঞ্চলিক কেন্দ্র ৬টিসহ ১৯টি স্থাপন, প্রত্যেক কেন্দ্রে একজন করে প্রো-ভিসি নিয়োগ, প্রয়োজনীয় সংখ্যাক শিক্ষক, ক্লাস রুম সংখ্যা বৃদ্ধি, সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও গবেষণাগার নিশ্চিত, তিন মাসের মধ্যে সব ধরনের পরীক্ষার ফল প্রকাশ, ফলের ভিত্তিতে ভর্তি বা একটি অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালু, সব সেশনের জন্য একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, ফি হ্রাস, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিশেষ বরাদ্দ ইত্যাদি।
মতামতের সঙ্গে প্রায় সহমত প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) হেলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আনুষঙ্গিক চাহিদা এবং ক্যাপাসিটি নিয়েও কথা উঠবে। সিনেটের এসব পয়েন্ট সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে বলে মত দেন তিনি।
এছাড়াও অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আসলাম ভূঁইয়া ও ড. মুনাজ আহমেদ নূর ও কোষাধ্যক্ষ নোমান উর রশীদ, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক এম.এ মান্নান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ০৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৪