ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

৯০ বছর বয়সে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী!

সজিব তৌহিদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫
৯০ বছর বয়সে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থী!

ঢাকা: শিক্ষার কোনো বয়স নেই। এই শ্বাশত বাণী পৃথিবীর জ্ঞানপিপাসু মানুষ বার বার প্রমাণ করেছেন।

এবার কেনিয়ার ৯০ বছরের এক বৃদ্ধা সেটা আবারও বিষ্ময়করভাবে প্রমাণ করলেন।

৯০ বছরের বার্ধক্যকে থোরাই কেয়ার এই বৃদ্ধা তার ছয় বছরের নাতি-নাতনিদের সঙ্গে স্কুলে গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে নীরবে অধ্যয়ন করে যাচ্ছেন।

তিনিই হচ্ছেন বর্তমান বিশ্বের প্রবীণতম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তার নাম প্রিসিলা সিটিনে (Priscilla Sitienei)।

এই ৯০ বছর বয়সেও শিক্ষার্থী প্রিসিলা দিব্যি স্কুল ড্রেস পরে করে শ্রেণিকক্ষের সামনের বেঞ্চে বসে ক্লাস করেন। পাঁচ বছর আগে তিনি স্থানীয় লিডার্স ভিশন প্রিপারেটরি স্কুলে ভর্তি হন।

এর আগে বিগত ৬৫ বছর ধরে তিনি তার গ্রামের নাডালাট রিফট উপত্যকায় সেবামূলক কাজ করে আসছিলেন।

প্রকৃতপক্ষে, প্রিসিলা তার সহপাঠী যাদের বয়স ১০ থেকে ১৪ বছর তাদের তিনি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।

প্রিসিলা সিটিনে বলেন, আমি পৃথিবীর শিশুদের বলতে চাই, বিশেষত মেয়ে শিশুদের; শিক্ষাই হবে তোমাদের জীবনের সম্পদ।

কেনিয়ার স্থানীয় ক্যালিনজিন ভাষায় তিনি ‘গোগো’ বা নানি হিসেবে পরিচিত। ছোটবেলায় তিনি পড়ালেখা করার সুযোগ পাননি। তাই বলে পড়ালেখাকে চিরতরে বিদায় জানাতে পারেননি। জ্ঞান অর্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে তিনি আবারও বিদ্যালয়ে পড়ালেখায় মগ্ন হয়ে পড়েন।

ইংরেজি ভাষায় চেয়ে স্থানীয় ক্যালিনজিন ভাষায় কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ৯০ বছরের শিক্ষার্থী প্রিসিলা।

তিনি বলেন, আমি বাইবেল পড়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে চাই। আরো বেশি চাই, সেই শিক্ষায় শিশুদের উৎসাহিত করতে।

এত বেশি বয়সে তার স্কুলে পড়া নিয়ে কেউ কেউ হাসি-ঠাট্টা করেন। তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি স্কুলে এসে ভালো আছি। তোমাদেরও আসা উচিত।
 
যে সব ছেলেমেয়েরা অসহায়, পিতাহীন, ছিন্নমূল বা পথশিশু আমি তাদের স্কুলে আসতে উৎসাহিত করি বলে জানান গোগো।

গোগোর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ডেভিড কিনইয়ানজুই বিশ্বাস করেন, গোগো তার ক্লাসের সেরা দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, আমি তাকে (প্রিসিলা) নিয়ে গর্বিত। তিনি এই স্কুলের আর্শীবাদ হয়ে এসেছেন। তিনি সব শিক্ষার্থীর একজন প্রেরণাদানকারী ব্যক্তিত্ব।

তিনি বলেন, সিটিনে (গোগো) ব্রিটিশ শাসিত কেনিয়াতে বড় হয়েছেন। সারাজীবন তিনি তার দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন।

তিনি এখন বেশ ভালো একজন মনযোগী শিক্ষার্থী। অংক, ইংরেজি, নাচ, গান এবং নাটক সবকিছুই তিনি সমান তালে করতে পারেন।

সবুজ রঙের স্কুল ড্রেস আর সবুজ জাম্পার পরে প্রিসিলা তার সহপাঠীদের নিয়ে স্কুলের মাঠের পাশে একটা গাছের নিচে বসে একের পর এক গল্প করেন। তার সহপাঠীরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই গল্প শোনে।

১১ বছরের শিশুশিক্ষার্থী তার সম্পর্কে বলে, গোগো তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। কারণ, সে আমাদের সঙ্গে গল্প করে। অনেক অজানা অনেক কিছু আমাদের শেখায়।

১০ বছরের এক স্কুলছাত্র বলে, গোগোকে (নানি) আমরা অনেক ভালোবাসি। কারণ, সে আমাদেরও অনেক ভালোবাসে। সে আমাদের সঙ্গে গল্প করে, দুষ্টুমি করে আবার শাসনও করে।

গিনেজ বুক অব রেকর্ডসে ঠাঁই পাওয়া চলতি বিশ্ব রেকর্ডটি রয়েছে অন্য এক কেনিয়ান কিমানি মার্কের। তিনি ৮৪ বছরে বয়সে ২০০৪ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এর পাঁচ বছর পর তিনি মারা যান।

এবার নিশ্চয়ই গিনেজ বুক অব রেকর্ড কর্তৃপক্ষ ৯০ বছরের এই প্রাথমিক বিদ্যালয় নারী শিক্ষার্থীর নামটি অন্তর্ভুক্ত করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।