ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণিত বিভাগে ভর্তি হয়ে ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। কিন্তু কোর্স শেষ না করায় তিনি ঢাবি থেকে কোনো সনদ পাননি।
তবে ছাত্রত্ব বাতিল, মামলা বা অন্য কোনো উপায়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা সে বিষয়টি ভেবে দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাবির দায়িত্বশীল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি, ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে একটি ফোনালাপের রেকর্ডে মান্নার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র’ ফাঁস হওয়ায় তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে পুরো ঢাবি পরিবার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ মহল থেকে অবিলম্বে মান্নাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো ছাড়াও ঢাবি শিক্ষক সমিতি থেকে তার ছাত্রত্ব বাতিলের দাবি ওঠে। ছাত্রলীগও এক সমাবেশ থেকে মান্নাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে।
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে জানান, তিনি (মান্না) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সের একটি বিভাগে ভর্তি হলেও কোর্স শেষ করেননি তিনি। তাই, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো সনদ দেয়নি।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার ছাত্রত্ব বাতিল বা তার বিরুদ্ধে মামলা করা যায় কিনা তাও ভেবে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাংলানিউজকে ঢাবি উপাচার্য বলেন, যেহেতু তার (মান্না) সনদই নেই, তাই বাতিলেরও প্রশ্ন নেই। তবে ছাত্রত্ব বাতিল, মামলা বা অন্য কোনো উপায়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা, তা ভেবে দেখা হচ্ছে।
জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নির্বাচিত হন মান্না। এর আগে ১৯৭২ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় জাসদ ছাত্রলীগ থেকেই চাকসু’র ভিপি নির্বাচিত হন।
মান্নার ‘ষড়যন্ত্র’র বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাবি উপাচার্য বাংলানিউজকে আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ ও শান্তিপ্রিয় শিক্ষার্থীদের লাশ নিয়ে ষড়যন্ত্র এটা তো অচিন্ত্যনীয় একটি বিষয়। তাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সম্প্রতি, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র চলছে, ওই নেতার বক্তব্যের মাধ্যমে তার বহির্প্রকাশ ঘটেছে।
এদিকে, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ ও ‘রাষ্ট্রের মূলে আঘাত হানার ষড়যন্ত্র’-এর অভিযোগে মান্নার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে ঢাবি শিক্ষক সমিতি।
সোমবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত ছয় বছরে যে বিশ্ববিদ্যালয় একদিনও অনির্ধারিত বন্ধ থাকেনি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে চাওয়ায় তার (মান্নার) এ ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নেবে না বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
তাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে নাশকতা পরিকল্পনাকারী ও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে মান্নার ছাত্রত্ব বাতিলসহ আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।
একই সঙ্গে রাষ্ট্রবিরোধী এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সামরিক-বেসামরিক যাদের যোগসাজশ রয়েছে, তাদেরও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানায় শিক্ষক সমিতি।
এদিকে, সোমবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাবি’র অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণার পাশাপাশি তাকে দেখামাত্রই ‘গণপিটুনি’ দেওয়ার ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগ।
সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ’৭৫-র পর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মান্নার উত্থান। ‘অবশিষ্ট নাগরিক’ হিসেবে আজ তিনি রাজনীতিতেও ‘অবশিষ্ট’। তাই, ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। ‘লাশ ফেলে মান্না, হতে চান আন্না (ভারতের আন্না হাজারে)’বলেও মন্তব্য করেন সোহাগ।
একই সমাবেশ থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা ছাড়াও যেখানেই পাওয়া যাবে, সেখানেই তাকে ‘গণপিটুনি’ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৫