লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভাদাই দক্ষিণপাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ২৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন ১৩ জন।
বিএসসি পাশ না করেও বিএসসি শিক্ষক, বিপিএড পাশ না করেও শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে নয় কোডে বেতন ভাতা পাচ্ছেন বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক।
মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, হাজিরা খাতায় ২৪ জন শিক্ষার্থী থাকলেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে সাতজন, সপ্তম শ্রেণিতে ছয়জন ও অষ্টম শ্রেণিতে একমাত্র ছাত্র বিপুলকে শ্রেণিকক্ষে দেখা গেছে।
তিনটি শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিস কক্ষ নিয়ে ১৯৯২ সালে বিদ্যালয়টি যাত্রা শুরু করে।
বিপুল বাংলানিউজকে জানান, হাজিরা খাতায় আটজন শিক্ষার্থী থাকলেও সে একাই নিয়মিত ক্লাস করে।
দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতেও।
এ ২৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে সরকারি বেতন ভাতা পাচ্ছেন নয়জন শিক্ষক ও দুইজন অফিসের কর্মচারী। চলতি এমপিও সিটে আরও দুইজন সহকারী শিক্ষকের বেতন আসায় বিষয়টি সর্বসাধারণের দৃষ্টিকাড়ে। শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিপিএড প্রশিক্ষণের সনদ ছাড়াই শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে নয় কোর্ডে সরকারি বেতনভাতা উত্তোলন করছেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মাহাবুবার রহমান।
শুধু তাই নয় বিএ পাশ করেই গণিতের বিএসসি শিক্ষক হিসেবে বেতন ভাতা নিচ্ছেন অপর এক শিক্ষক আব্দুল মান্নান।
এতেই শেষ নয় ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ভুঁয়া শাখা দেখিয়ে ৯ কোর্ডে বেতন পাচ্ছেন সকহারী শিক্ষক সোহরাব আলী সরকার ও শহীদুল ইসলাম।
শাখা শিক্ষক হিসেবে চলতি মাসের এমপিও সিটে বেতন আসে আভা রানী ও কল্পনা রানী রায় নামে দু’জন নতুন শিক্ষিকার।
বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে ঝামেলা এড়াতে বেতন ভাতা উত্তোলন করেননি নতুন দুই শিক্ষিকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে এমপিওভুক্ত আবেদনপত্রে দেখানো হয়েছে, ওই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির “ক” শাখায় ৪০ জন, “খ” শাখায় ৪৫ জন, সপ্তম শ্রেণির “ক” শাখায় ৪০ জন,“খ” শাখায় ৪২ জন, অষ্টম শ্রেণির “ক” শাখায় ৪০ জন ও “খ” শাখায় ৪২ জন।
সর্বমোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ২শ’ ৪২ জন। যদিও বাস্তবে হাজিরা খাতায় মাত্র ২৪ জন আর উপস্থিতি পাওয়া যায় মাত্র ১৪ জন শিক্ষার্থীর।
তবে বিদ্যালয়টিতে কোনো শাখা খোলা নেই বলে স্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, আপাত কোনো শাখা নেই। তবে আগামীতে খোলা হবে। এ জন্য হয়তোবা প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি নিজেই বিএ পাশ করেই কি ভাবে হলেন বিএসসি শিক্ষক এমন প্রশ্নের কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
বিপিএড সনদ ছাড়াই শরীরচর্চার শিক্ষক মাহবুবার রহমান বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় তিনি নিয়োগ পেয়েছেন সহকারী শিক্ষক হিসেবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাঠামোতে তাকে শরীরচর্চার শিক্ষক করেছেন অধিদপ্তর। কিভাবে হয়েছে তা তার জানা নেই।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক গণেশ চন্দ্র রায় ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, আগে শিক্ষার্থী ছিল, চলতি বছর পাশে কয়েকটি বিদ্যালয় হওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী কমে গেছে।
তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়মানুযায়ী করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। আর অভিযুক্তদের বেতন ভাতা দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাট জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম মোসলেম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, সঠিক নিয়মানুযায়ী দু’জন শিক্ষকের এমপিওভুক্ত হয়নি বলে নতুন শিক্ষকদের বেতন ভাতা উত্তোলন করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ কিংবা পত্রিকায় লেখালেখি হলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান শিক্ষা বিভাগের এ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৪২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫