ঢাকা: ১৬ জানুয়ারি সকাল নয়টা আগেই প্রভাষক পদের জন্য প্রায় দুইশ’ চাকরিপ্রার্থী জড়ো হন যাত্রাবাড়ি টনি টাওয়ারের নিচে। কিন্তু হায়! তারা সব সার্টিফিকেটের ফটোকপিসহ আবেদনপত্র কোথায় পাঠিয়েছিলেন।
যাত্রাবাড়ির ৩৩ শহীদ ফারুক রোডে নির্মানাধীন টনি টাওয়ারে অবস্থিত ঢাকা চাটার্ড কমার্স কলেজটির সাইনবোর্ড থাকলেও সেখানে কলেজ নেই। নিচতলায় ওমেগা কোচিং সেন্টারে চাকরি প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখা হচ্ছে। এর পঞ্চম তলায় নেয়া হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা।
সেখানে আগত চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী রাহুল জানান, এখানে কলেজ নেই। রয়েছে স্বদেশ প্রপার্টিজের অফিস। এ অফিসের বিভিন্ন রুমেই নেয়া হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা।
পরীক্ষায় বেশ ভালো জবাব দিয়েছে রাহুল। কর্তৃপক্ষের কথানুযায়ী সন্ধ্যার পরেই ফোন দিয়ে ফল জানানোর কথা। কিন্তু সেদিন কোনো খোঁজ না পেয়ে পরদিন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে থাকা কলেজের পরিচালকের নাম্বারে ফোন দেন তিনি।
পরিচালক আবু হানিফ হৃদয় রাহুলকে কয়েকদিন পরে দেখা করতে বলেন। সাক্ষাৎকারে চাকরির শর্তগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় রাহুলকে।
রাহুল বাংলানিউজকে তাদের দুই জনের কথোপকথনের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা হু্বহু তুলে দেওয়া হলো,
পরিচালক: চাকরিটা আপনার খুব প্রয়োজন।
রাহুল: জ্বী।
পরিচালক: আমাদের কলেজতো নতুন। স্টুডেন্ট দিতে পারবেন?
রাহুল: কলেজের শিক্ষক হিসেবে চাকরি পেলেতো সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তির চেষ্টা করবোই।
পরিচালক: শুধু চেষ্টা করলে হবে না। কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করান। চাকরি হয়ে যাবে। সঙ্গে বেতন আরো পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে দেবো।
রাহুল: ভালো ভাবেই চেষ্টা করবো।
পরিচালক: আরেকটা বিষয় হচ্ছে, সার্টিফিকেটের আসল কপি জমা রাখতে হবে এবং ৫০ হাজার টাকা জামানত রাখতে হবে।
রাহুল: জামানত দেব, কিন্তু সার্টিফিকেট জমা দেবো না।
পরিচালক: তাহলে এক লাখ টাকা জামানত দিতে হবে।
রাহুলের পক্ষে সম্ভব হয়নি ২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো ও এক লাখ টাকা জামানত রাখা। তাই চাকরিও হয়নি।
পরে অন্য চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেও একই তথ্য পান রাহুল। সকলকেই এসব কথা বলেছেন পরিচালক।
বিজ্ঞাপনটি ছিল আকর্ষণীয়। জাতীয় দৈনিকে দেয়া বিজ্ঞাপনে ২০টি বিষয়ে দুই জন করে প্রভাষক চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলো কলেজ কর্তৃপক্ষ। যোগ্যতা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। কলেজের কোনো কাঠামো না থাকলেও, অধ্যক্ষ বরাবর আবেদন করতে বলা হয়েছে। আর দেড়শ টাকার পে-অর্ডারতো ছিলই।
কলেজটির পরিচালক আব্দুল হানিফ হৃদয়ের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থী হিসেবে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সোমবার (২ মার্চ, ২০১৫) বিকেলে কথোপকথনে তিনি জানান, নিয়োগ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে। কিছু বিষয়ে খালি রয়েছে। এসব বিষয়ে কিছুদিনের মধ্যে আবারো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।
এরপর সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফোন রেখে দেন পরিচালক হৃদয়।
১০৭/১ প্রগতি স্বরনী বাড্ডায় মনপুরা কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৫ এপ্রিল। প্রায় ৭০টি পদের জন্যে ওইদিন সকাল থেকেই প্রায় হাজারের কাছাকাছি প্রার্থী সেখানে ভিড় করেন। তাদের প্রত্যেকেই আবেদনপত্রের সঙ্গে পাঠিয়েছেন ৩০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট।
ওই কলেজে প্রভাষক পদে আবেদনকারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করা রাকিবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, তার বিষয়ে মৌখিক পরীক্ষায় ১৫ জনের মতো প্রার্থী অংশ নেন।
কত বেতন আশা করছেন জানতে চাইলে, লিখিত পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৩য় অবস্থানে থাকায় রাকিবুল ৩০ হাজার টাকা দাবি করেছেন বলে জানান। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উত্তর শুনে তার চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায়! সপ্তাহে কলেজে আসতে হবে ছয় দিন। আর বেতন দেওয়া হবে তিন হাজার টাকা। কোনো কথা না বলেই চলে আসেন রাকিবুল।
এ বিষয়ে জানতে কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে কলেজে কর্মরত একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কলেজে বেশির ভাগ শিক্ষকেরই বেতন পাঁচ থেকে আট হাজার টাকার মধ্যে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একজন রিকশাওয়ালারও মাসিক আয়ও এর চেয়ে বেশি। তাহলে স্নাতক পাস করলাম কেন!
কলেজগুলোর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগে বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের (মাউশি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন সোমবার বিকেলে বাংলানিউজকে বলেন, এসব প্রতিষ্ঠান কিভাবে চলছে, তা খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ পেলে এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।
বিদ্র: দেশের যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসাসহ যে কোনো ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী বা অভিভাবকেরা যে কোনো ধরনের সমস্যা সর্ম্পকে জানাতে মেইল করুন [email protected] এ আইডিতে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৫