ঢাকা: বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ না থাকলে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফলাফল আরও ভালো হতো বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (৩০ মে) সকালে গণভবনে তার হাতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল তুলে দেওয়ার পর বক্তৃতায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
এ সময় সব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতবার ৯৩ শতাংশ পর্যন্ত পাসের হার তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম। খুব আশা ছিল, এবার আরও বৃদ্ধি পাবে। যদি হরতাল-অবরোধ না থাকতো, বারবার পরীক্ষার সময় পরিবর্তন না হতো, তাহলে অবশ্যই পাসের হার বাড়তো, ছেলে-মেয়েরা আরো ভালো রেজাল্ট করতো।
হরতাল-অবরোধে সহিংসতার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষামন্ত্রীকে আমি বললাম, এতো মানুষের জীবন আমি ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না। ঠিক আছে, যখন হরতাল থাকবে না, অবরোধ থাকবে না, তখন ফাঁকে ফাঁকে পরীক্ষা হবে। যদিও তাদের হরতালে মানুষের সাড়া ছিল না।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দিয়ে এ ফলাফল করায় পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার্থীদের কষ্ট হয়েছে। এভাবে মনোযোগ নষ্ট হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরা মেধাবী। তারা সুযোগ পেলেই ভালো ফলাফল করতে পারে।
এ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও পাসের হার এ পর্যায়ে আনা এটা কিন্তু কম কথা নয়। এটাও একটা বিরাট অর্জন। ভবিষ্যতে আমি আশা করি, পাসের হার আরও বাড়বে।
এখনো চলমান বিএনপির অবরোধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অবরোধ বোধহয় এখনো চলমান। ওইটা নাকি প্রত্যাহার হয়নি। যাই হোক, বাংলাদেশের মানুষ ওই হরতালে সাড়া দেয়নি। এটা একটা গোষ্ঠীর স্বার্থে, জনস্বার্থে না। সেজন্য তারা জনসমর্থন পায়নি।
বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের সহিংসতাকে একাত্তরের হানাদার বাহিনীর সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভাবে মানুষ পুড়িয়ে আন্দোলন আমি কখনো দেখিনি। এ কর্মকাণ্ড একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের মতো। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশকে পোড়ামাটি করতে চেয়েছিল। তাদের নীতিই ছিলো- ‘মানুষ চাই না, মাটি চাই’। তাদের সেই প্রতিধ্বনিই যেন দেখেছি বিএনপি নেত্রীর মুখে। তারা হুকুম দিয়ে মানুষকে হত্যা করেছে, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।
যে মানুষের জন্য রাজনীতি সেই মানুষকে পুড়িয়ে কোন ধরনের রাজনীতি করে বিএনপি? এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।
হরতাল-অবরোধের নাশকতায় চোখ হারানো অনিক এবং হৃদয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদেরও পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। আমরা অনিকের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। তাকে বলেছি, তুমি আগামীতে পরীক্ষা দেবে এবং পাস করবে।
বিএনপি-জামায়াতকে সহিংসতার পথ পরিহার করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ঘটনা আর যেন না ঘটে। ঘটলে আমরা তাদের ছাড়বো না। আমরাতো তাদের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিতে পারি না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফিন এবং নীলফামারীর জেলা প্রশাসক জাকির হোসেনের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন।
ভিডিও কনফারেন্সে দুই জেলার রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় ছাত্র-ছাত্রীদের সাবলীল বক্তব্যে খুশি হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে এই শিক্ষার্থীরাই দেশের কর্ণধার হবে। তাই আমাদের একটি শিক্ষিত জাতি গড়তে হবে।
তিনি বলেন, দেশ ও জাতির উন্নয়নে শিক্ষাই একমাত্র হাতিয়ার। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে না। এজন্যই কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি আমরা। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম উচ্চশিক্ষা বৃত্তি দিয়েছে। গঠন করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট।
বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে শিক্ষার আলো জ্বালানোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। যেন বাংলাদেশের কোনো মানুষ অশিক্ষিত না থাকে। ঘরে ঘরে আমরা আলো জ্বালবোই। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা প্রসারের ওপর গুরুত্ব দিতে বলেন সংশ্লিষ্টদের।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সকল শিক্ষাবোর্ড, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৫
এমইউএম/এসইউ/এএসআর