ডেমরা থেকে: স্বপ্ন ছিল একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী এসে স্কুল পরিদর্শন করবেন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সমন্বিত প্রচেষ্টা চলে শিক্ষক- শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
মাত্র ২৫ শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হওয়া একটি কিন্ডার গার্টেন আজ ১০ হাজার শিক্ষার্থীর শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। আর প্রধানমন্ত্রীর স্কুল পরিদর্শনের স্বপ্নও যেন পূরণ হওয়ার পথে।
প্রধানমন্ত্রী স্কুল পরিদর্শন করুন আর না করুন, দেশের সব মানুষ আজ জানেন, ২০১৫ সালে এসএসসিতে দেশের সেরা স্কুল শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে। নিরলস পরিশ্রমের সফলতা আর সান্ত্বনা তো এটাই।
শনিবার (৩০ মে) দুপুরে রাজধানীরে উপকণ্ঠে ডেমরা এলাকার পাড়াডগার গ্রামের শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহমুদুর রহমান মোল্লা ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা শামসুল হক খানের ছেলে সাইফুল হক খান এভাবেই তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটর দূরে ডেমরার মাতুয়াইল পাড়াডগার গ্রাম। সেখানে আজকের দেশসেরা শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
কিন্ডার গার্টেন থেকে সেরা স্কুল
১৯৮৯ সালে মাত্র ২৫ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা করে শামসুল হক খান কিন্ডার গার্টেন। তারপরে শামসুল হক খান স্কুল। সর্বশেষ শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। অতঃপর ২০১৫ সালে এসএসসিতে দেশের সেরা স্কুল। বর্তমানে ১০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
অধ্যক্ষ ড. মাহমুদুর রহমান মোল্লা জানান, ১৯৯৪ সালে নবম ও দশম শ্রেণীর স্বীকৃতির পর থেকেই স্কুলটি ধারাবাহিকভাবে ভাল ফলাফল করছে। গত বছরও শতভাগ পাস করেছে এখানে। ২০১২ সালে দেশের দ্বিতীয় সেরা হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশা ছিল একদিন দেশের সেরা হবে। আর তাতে প্রধানমন্ত্রীর স্কুল পরিদর্শনের সুযোগ পাবে প্রতিষ্ঠানটি।
অধ্যক্ষ বলেন, গত বছরও ভাল ফলাফল করেছে এই প্রতিষ্ঠান। পিএসসিতে ষষ্ঠ, জেএসসিতে চতুর্থ স্থান করে এই প্রতিষ্ঠান।
প্রাইভেট পড়ানো প্রয়োজন হয় না
অধ্যক্ষ ড. মাহমুদুর রহমান মোল্লা বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবাই সমন্বিতভাবে ভাল ফলাফলের জন্য প্রচেষ্টা চালাই। শিক্ষকরা নিজেরাই শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা সমাধান করে দেই। এর ফলেই আজ সেরা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
সাফল্যের নেপথ্যে এস-নেট প্রোগ্রাম
ভাল ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় অধ্যক্ষ বলেন, গভর্নিং বডির গতিশীল নেতৃত্ব, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সমিন্বিত প্রচেষ্টা ভাল ফলাফল নিশ্চিত করেছে।
একটি বিশেষ উদ্যোগ নিউক্লিয়ার এডুকেশন টিম (এস-নেট) প্রাইভেট পড়ানোর বিকল্প হিসেবে কাজ করেছে। একজন শিক্ষক ১৫ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে টিম করে তাদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করেছেন। সাপ্তাহিক মিটিং করে শিক্ষার্থীর চিহ্নিত সমস্যা সমাধানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বছরের শুরুতেই সমস্যা চিহ্নিত করে সারা বছর সমস্যা সমাধানে কাজ করেছেন শিক্ষকরা।
পাড়া-গাঁয়েও পড়াশোনা সম্ভব
রাজধানীর উপকণ্ঠে হলেও অনেক সুযোগ সুবিধাই পৌঁছে না এই পাড়াডগার গ্রামে। আটটি থানা এলাকার কষ্ট করা মানুষের সন্তানেরা যেন ভাল শিক্ষা বঞ্চিত না হয়, সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি- জানান অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের যেন অন্যত্র কষ্ট করে যেতে না হয়, সে জন্য পাশেই আরেকটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই স্কুলের শাখা খুলতে না পেরে নিজের নামে আরেকটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। ওই প্রতিষ্ঠানটিও ভাল ফলাফল করেছে। দেশের সেরা স্কুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই ফলাফল করছে।
অধ্যক্ষ বলেন, আমি যখন এই প্রতিষ্ঠানে আসি, তখন ১২৫ জন শিক্ষার্থী ছিল। এখন ১০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে এই প্রতিষ্ঠান।
বাবার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের এমন ফলাফলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন শামসুল হক খানের ছেলে সাইফুল হক খান।
শনিবার প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করে শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৭৭৯ জন শিক্ষার্থী পাশ করেছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৪০ শিক্ষার্থী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৫
এসএমএ/এইচএ