ঢাকা: নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের উপস্থিতির বিচারে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগদানের আদেশ বাতিল করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
ক্লাসে উপস্থিতির বিচারে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলে শিক্ষার্থীদের ‘মনোযোগ নষ্ট হবে’ এই কারণে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খানের আদেশ বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
‘পাবলিক পরীক্ষার আগে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজন করে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অনুত্তীর্ণ কিন্তু ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিতি ছিল, এমন শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে’ গত ১ মার্চ শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত পরিপত্র জারি করা হয়।
সকল বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, কারিগরি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্রধানদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
সোমবার (০৩ আগস্ট) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, ওই নির্দেশনা সম্বলিত পরিপত্রটি জারির পর শিক্ষক-অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ এবং সুশীল সমাজের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
‘নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ’
আদেশে বলা হয়, বিভিন্ন বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা থেকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া সত্বেও অযোগ্য অনিয়মিত ছাত্র/ছাত্রীকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রেরণ করা মোটেই কাম্য নয়।
‘যোগ্যতাবিহীন অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে পাবলিক পরীক্ষায় প্রেরণ করা হলে নিয়মিত ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এজন্য পাবলিক পরীক্ষার আগে নির্বাচনী পরীক্ষার আয়োজন একটি প্রচলিত ধারা। এ ধারায় শিক্ষার্থীরা চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য লেখাপড়ায় অধিকতর মনোযোগী হয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে থাকে। ’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা হয়, শুধুমাত্র ৭০ শতাংশ ক্লাস হাজিরার ভিত্তিতে নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হলে পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগ নষ্ট হবে এবং পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। এতে পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তবে অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুযোগ প্রভৃতি কারণে কোন শিক্ষার্থী নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে অসমর্থ হলে তাদের একাডেমিক আগের রেকর্ড ও ক্লাস কাযর্ক্রমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কর্তৃক বিবেচনার প্রচলন রয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিবেচনা করতে পারবে বলে আদেশে উল্লেখ রয়েছে।
‘কিন্তু নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে শুধুমাত্র ৭০ শতাংশ উপস্থিতির কারণে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া সঠিক হবে না। ’
শিক্ষাসচিবের পরিপত্রে বলা ছিল, ‘...লক্ষ্য করা গেছে কোনো কোনো বিদ্যালয় শত ভাগ পাস কিংবা ভালো ফলাফল দেখানোর জন্য নির্বাচনী পরীক্ষায় এক বা একাধিক বিষয়ে অকৃতকার্যতার অজুহাতে পরীক্ষার্থী ছাঁটাই করে। অপরপক্ষে অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ঘটনা এবং বিভিন্ন অযোচিত ঘটনার জন্যও কিছু শিক্ষার্থী পাবলিক পরীক্ষার আগে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন না। ’
‘উপরোক্ত অবস্থা নিরসনকল্পে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অনুত্তীর্ণ কিন্তু ৭০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত ছিল এমন শিক্ষার্থীদের পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হলো। ’
‘ওই পরিপত্রটি বাতিল করা হলো’ বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব অসীম কুমার কর্মকার স্বাক্ষরিত সোমবারের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
চলতি বছর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে প্রক্রিয়া নিয়ে মন্ত্রী ও সচিবের দ্বন্দ্ব দেখা যায়। শিক্ষাসচিব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগদানের পর বেশ কয়েকটি পরিপত্র জারি করা হয়। এরমধ্যে ফলের ভিত্তিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সচিবের পরিপত্রও স্থগিত করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
অনলাইনে ভর্তি নিয়ে জটিলতার পর মন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তাই কোনো আদেশ জারি করতে পারবেন না বলে নির্দেশনা জারি করা হয়।
একাদশে অনলাইনে ভর্তি জটিলতার মধ্যে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে ‘এক্সচেঞ্জ/স্ট্যাডি ভিজিট প্রোগ্রামে’ অংশ নিয়ে শিক্ষাসচিব দেশে ফেরার একদিন পর নির্বাচনী পরীক্ষার এই আদেশ জারি করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৫
এমআইএইচ/বিএস
নির্বাচনীতে পাস করেই চূড়ান্ত পরীক্ষা
টেস্টে পাস না হলেও দেয়া যাবে এসএসসি, এইচএসসি