ঢাকা, সোমবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

পাঞ্জেরীর গাইড বই বিক্রিতে শিক্ষকদের উপঢৌকন!

হাসিবুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৫
পাঞ্জেরীর গাইড বই বিক্রিতে শিক্ষকদের উপঢৌকন! ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালুর পাশাপাশি ২০১৩ সালে গাইড বই নিষিদ্ধ করে সরকার। একইসঙ্গে প্রতি বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে তুলে বই তুলে দিতেও শুরু করে।

কিন্তু নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা শিক্ষকদের সঙ্গে যোগসাজশে তাদের ‘উপঢৌকন’ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন মেধা ধ্বংসকারী গাইড বই।
 
দেশজুড়েই নোট-গাইড এজেন্টরা সক্রিয়, গাইড ব্যবসায়ীরা শিক্ষকদের নানা ‘উপঢৌকন’ দিয়ে, ‘কমিশন’ দিয়ে নোট-গাইড ব্যবসাকে প্রতিটি শিক্ষার্থী-অভিভাবকের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছেন। আর শিক্ষকেরা বলায় শিক্ষার্থীরাও কিনতে বাধ্য হচ্ছে এসব গাইড বই। পুরো বছরজুড়েই চলতে থাকে গাইড ব্যবসায়ীদের এ অপতৎপরতা।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীসহ দেশের প্রতি জেলা-উপজেলায় গাইড ব্যবসায়ীদের বিক্রয় প্রতিনিধিরা শিক্ষকদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে এসব বই নিতে এক প্রকার বাধ্য করেন। বাজারে পাঞ্জেরী, নবদূত, জুপিটার এরকম নানা নামে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে গাইড বই প্রতিবছরই বাজারে আসে। শিক্ষকেরাও ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের পীড়াপীড়িতে এসবের কোনো না কোনোটা নিতে বাধ্য হন।
 
Guide_bookবাজারে যেসব প্রতিষ্ঠানের গাইড বই রয়েছে সেসবের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী প্রকাশনী। এই প্রতিষ্ঠানটিই মূলত দেশের গাইড বইয়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এরা শিক্ষকদের নগদ অর্থসহ নানা ‘উপঢৌকন’ দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
 
বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পাঞ্জেরী প্রকাশনী দ্বিতীয় শ্রেণির গাইড বই বিক্রি করা হচ্ছে ‘একের ভিতর সব’ নামে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির গাইড বইয়ের নাম ‘একের ভেতর ১১’। আর পঞ্চম শ্রেণির গাইড বই রয়েছে ‘প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী সহায়িকা’ নামে। এছাড়া, ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন গাইড বই।
 
এ বিষয়ে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণীর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে জানান, শ্রেণি শিক্ষকই তাদের পাঞ্জেরীর গাইড বই কিনতে বলেছেন। তাই তার অভিভাবক পাঞ্জেরী গাইড কিনে দিয়েছেন।
 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জামায়াতের প্রতিষ্ঠান বলে পরিচিত পাঞ্জেরী প্রকাশনীর সহকারী ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, পাঞ্জেরী ‘গাইড’ বই নয়, ‘অনুশীলনীমূলক’ বই বিক্রি করে।

শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ব্যস্ত আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি একদিন অফিসে আসেন, চা খেয়ে যান। তখন কথা বলবো। ’

পাঞ্জেরীর সহকারী ব্যবস্থাপক এসময় প্রতিবেদককে অর্থ ‘উপঢৌকনে’রও ইঙ্গিত করেন।
 
১৯৮০ সালে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নোট বই নিষিদ্ধকরণ আইন প্রণীত হয়। এ আইনের ৩ ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ব্যক্তি নোটবই মুদ্রণ, প্রকাশনা, আমদানি, বিক্রয়, বিতরণ অথবা কোনো প্রকারে উহার প্রচার করিতে বা মুদ্রণ, প্রকাশনা, বিক্রয়, বিতরণ কিংবা প্রচারের উদ্দেশে রাখিতে পারিবেন না। ’ এ আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়েছে।

পরে ২০১৩ সালে একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে নোটবই নিষিদ্ধকরণ আইনের আওতায় ‘গাইড বই‘ও বাজারজাত ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেন হাইকোর্ট।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৫
এইচআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।