ঢাকা, রবিবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৮ জুলাই ২০২৪, ২১ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা

জালিয়াত চক্রের টার্গেট প্রথম দশ মিনিট

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৫
জালিয়াত চক্রের টার্গেট প্রথম দশ মিনিট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একাধিক জালিয়াত চক্র। শুক্রবার(৯ অক্টোবর) থেকে শুরু হচ্ছে কলা অনুষদের অধীন খ-ইউনিটের পরীক্ষা।


 
পরীক্ষার আগে প্রশ্ন বের করার উপায় না পেলেও চক্রগুলো পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন বের করে আনার ছক কষছে বলে দাবি একাধিক সূত্রের। কারণ প্রশ্ন বের করতে বেশি দেরি হলে জালিয়াত মিশন সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
 
সূত্রমতে, কঠোর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণ করা হয়েছে। এ জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র বের করে আনার কৌশল নিচ্ছে চক্রগুলো। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এ কাজে তাদের সহায়তা করছে কিছু অসাধু শিক্ষক ও কর্মচারী।
 
জালিয়াত চক্রের ছক

বিগত বছরে জালিয়াতির দায়ে আটক একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে, নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর সঙ্গে টাকার চুক্তি থেকে শুরু করে কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র বের করে আনা এবং তা সমাধান করে শিক্ষার্থীকে পাঠানো পর্যন্ত কয়েকটি পর্যায়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়।
 
প্রথম পর্যায়ে একটি গ্রুপ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। কাঙ্ক্ষিত ইউনিটে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার শর্তে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চার থেকে ছয় লাখ টাকায় চুক্তি করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কিছু অংশ অগ্রীম নিয়ে তার মূল সনদ ও নম্বরপত্র জমা নেওয়া হয়।
 
দ্বিতীয় পর্যায়ে কিছু টার্গেটেড কেন্দ্রের শিক্ষক ও কর্মচারীর সঙ্গে টাকার বিনিময়ে চুক্তি করা হয়। চুক্তিবদ্ধ অসাধু শিক্ষক ও কর্মচারীরা ওই পরীক্ষার্থীকে বিশেষ মোবাইল ফোনসহ কিছু অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে ঢুকতে সহায়তা করে। এরপর পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যে প্রশ্নপত্রের প্রতিটি সেটের অতিরিক্ত কপি অথবা স্মার্টফোনের সাহায্যে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে অপেক্ষারত চক্রের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  
 
চক্রগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ থাকে কোচিং সেন্টারের কিছু অসাধু শিক্ষকের। প্রশ্ন বাইরে আসা মাত্রই দ্রুততম সময়ে তা সমাধান করে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর কাছে এসএমএস আকারে পাঠানো হয়।
 
এ জন্য জালিয়াত চক্র সহায়তা নেয় টেলিযোগাযোগে সক্ষম কিছু মাইক্রো ব্লুটুথ ডিভাইসের। অনেক শিক্ষার্থীর হাতঘড়িও এই প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়ে থাকে।
 
আর গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয় পরীক্ষা শুরু হওয়ার প্রথম দশ মিনিটের মধ্যে। পরীক্ষার সময় মাত্র ১ ঘণ্টা হওয়ায় প্রশ্নপত্র বের করতে দেরি হলে জালিয়াত চক্রের মিশন সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
 
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরের কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা জোরদার থাকায় চক্রগুলোর টার্গেট থাকে ক্যাম্পাসের বাইরের কেন্দ্রগুলো। বাইরের কেন্দ্রগুলোতে পরিদর্শক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই একজন শিক্ষক থাকলেও দায়িত্বে থাকেন মূলত ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাই। তাই ওইসব ‍শিক্ষকের সঙ্গে যোগসাজশ করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
 
ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগ উঠায় গতবছরই কেন্দ্র হিসেবে বাতিল করা হয় ঢাকা কলেজ ও তেঁজগাও কলেজকে। তবে কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ থাকলেও এবারও কেন্দ্র হিসেবে রাখা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে মোটামুটি একইভাবে প্রতিবছর প্রশ্ন জালিয়াতি করে আসছে একাধিক চক্র। বিভিন্ন ইউনিটের পরীক্ষা চলাকালে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থীকে জালিয়াতির দায়ে আটক করা হলেও তাদের তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় না কোন কঠোর ব্যবস্থা। ফলে আড়ালেই থেকে যায় চক্রের মূল হোতারা।
 
তবে এ বছর ছক কষলেও জালিয়াত চক্রগুলো সফল হবে না বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এএম আমজাদ বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই জোরদার থাকছে। তাছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতও থাকছে। যদি কেউ জালিয়াতির চেষ্টা করে তবে তাৎক্ষণিভাবে তার বিচার করে সরাসরি জেলে পাঠানো হবে।
 
আগামী ১৬ অক্টোবর বাণিজ্য অনুষদের অধীন গ-ইউনিট, ১৭ অক্টোবর চারুকলা অনুষদের অধীন চ-ইউনিট, ৩০ অক্টোবর বিজ্ঞান অনুষদের অধীন ক-ইউনিট এবং ৬ নভেম্বর  বিভাগ পরিবর্তনকারী  ঘ-ইউনিটের(সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০০২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৫
এসএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।