ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

আন্দোলনের নামে সহিংসতায় রাবিতে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
আন্দোলনের নামে সহিংসতায় রাবিতে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি

রাজশাহী: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় চালানো সহিংসতায় প্রায় চার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি আবাসিক হলের ১৫৮টি কক্ষে চালানো হয়েছে নারকীয় তাণ্ডব।

 

এ ঘটনায় গঠিত কমিটির প্রাথমিক তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া রোববার (২৮ জুলাই) ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলো পরিদর্শন করেছেন রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।

এ সময় রাবি উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক নাসিমা আখতার, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক তারিকুল হাসান, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রণব কুমার পান্ডে, লিগ্যাল সেলের প্রশাসক সাদিকুল ইসলাম, পরিবহণ প্রশাসক মোকছিদুল হক,ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সংশ্লিষ্ট হল প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষক এবং সহকারী প্রক্টররা উপস্থিত ছিলেন।  

এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ওমর ফারুক সরকার উপাচার্যের সঙ্গে ছিলেন।

পরিদর্শনকালে তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল, মাদার বখশ হল, শহীদ জিয়াউর রহমান হলসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেন।

রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সহিংসতার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক এসএম একরাম উল্লাহকে আহ্বায়ক করে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বকুলকে। তদন্ত কমিটিকে ঘটনার বিবরণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং কী করণীয় (সুপারিশ) সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এজন্য কমিটিকে আট সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।

রাবি উপাচার্য বলেন, এরই মধ্যে আবাসিক হলগুলোর প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ দিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষরা। তাতে দেখা গেছে ১০টি হলের ১৫৮টি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় চার কোটি টাকা। এখন আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আগে নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও হলগুলোকেও বসবাসের উপযোগী করতে হবে। বেশ কিছু হল এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে কেউ দেখলে তার মনে আঘাত লাগবে। তাই আমরা চাই না যে শিক্ষার্থীরা এসে এসব দেখুক। আমরা এসব সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।

উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সহিংসতা ঘটে গেছে তা খুবই দুঃখজনক। প্রথমে যে আন্দোলন হয়েছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ছিলো। কিন্ত গত ১৬ তারিখে একটা দুর্বৃত্তায়ন হয়ে গেল এখানে। বহিরাগতরা ঢুকে জ্বালাও-পোড়াও করে এই ক্যাম্পাসে। ১৭ জুলাই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেছিলাম। কিন্তু আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীরা বাইরে গিয়ে জানালো তাদের থেকে মাইক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। বহিরাগতরা ঢুকেছে এখানে, তাদের হাতে আন্দোলন নেই। তখনই বুঝতে পারলাম যে খারাপ দিকে যাচ্ছে বিষয়টা।

তিনি বলেন, ওইদিন শিক্ষার্থীরা আমাদের অবরুদ্ধ করেনি। আমরা লক্ষ্য করলাম বাইরে থেকে প্রচুর বহিরাগত সন্ত্রাসী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হুইসেল বাজিয়ে ঢুকতে শুরু করলো। তারা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে ইলেকট্রিসিটি লাইন কেটে, জেনারেটর বিস্ফোরণের চেষ্টা করে। এতে আমার সঙ্গে থাকা প্রায় অর্ধশত শিক্ষক এবং প্রায় শতাধিক কর্মচারী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে তারা নাশকতা করবে। এরপর আমরা একরকম বাধ্য হয়েই খবর দিলে এখানে থাকা যৌথ বাহিনী এসে আমাদের উদ্ধার করে।

রাবি ভিসি অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সেই সময় তারা লক্ষ্য করেছেন যে বিষয়টি এলে কোটা আন্দোলনকারীদের হাতে আর নাই, সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তারা শুধু এতেই শান্ত হননি। ১৮ জুলাই প্রশাসনের জানাজা পড়িয়েছে। জানি না কোনো ধর্মীয় বিধানে তা আছে কি না। তারা তো ধর্মের কথা বলে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০২৪
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।