ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

শিক্ষা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরীক্ষা, বসেনি মূল কমিটি

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরীক্ষা, বসেনি মূল কমিটি

ঢাকা: উচ্চশিক্ষায় খরচের লাগাম টানতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠিত মূল কমিটি দুই মাসেও বৈঠকে বসেনি। অন্যদিকে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এবং শর্ত পূরণে ব্যর্থ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করার কথা জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।



বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার স্বার্থে ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য গঠিত কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন উপস্থাপনের সুপারিশ করেছিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

গত বছরের ১ ডিসেম্বর ওই কমিটি গঠিত হওয়ার প্রায় দুই মাস পর বুধবার (২৭ জানুয়ারি) কথা হয় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল কুদ্দুসের সঙ্গে।

আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, এখনও বৈঠক হয়নি। বৈঠক হবে, তারপর জানাবো।

কী কী বিষয় আলোচনায় আসতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে বসে অ্যাক্ট দেখা হবে, যেগুলো জনস্বার্থ পরিপন্থী ও সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এরপর কমিটি যা ভালো মনে করবে, তা সুপারিশ করবে। এখনই বলা যাচ্ছে না।

কমিটিকে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিলো- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনস্বার্থে প্রয়োজনে আরও সময় নেবো। সংসদ চলছে, যেকোনো মুহূর্তে বসতে পারি।

‘বৈঠকের সুপারিশ নিয়ে সংসদীয় কমিটি, এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং, তারপর জাতীয় সংসদ...। ’
 
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান ও ইউজিসির সাবেক সদস্য অধ্যাপক আতফুল হাই শিবলী। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হেলাল উদ্দিনকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তিন ধরনের ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছে। নিজস্ব ক্যাম্পাস আছে, নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলে গেছে, নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য জায়গা কিনেছে বা ভবন করেছে বা সামান্য গেছে- এমন ক্যাটাগরি তৈরি করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সম্প্রতি এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে এক বছরের সময় দিয়ে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, দ্বিতীয় ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছর পর ভর্তি বন্ধ এবং তৃতীয় ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি বন্ধের পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য মনিটরিং করবে ইউজিসি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজে সরকারের তিনজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সংসদীয় কমিটি প্রস্তাব করেছে। এতে শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি টিউশন ফি’র লাগাম টানা সম্ভব হবে। এসবের জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন। বর্তমানে ১২ সদস্যের সিন্ডিকেটে সরকারের দু’জন প্রতিনিধি রয়েছেন।

আইনের ১৫ ধারা সংশোধন করে সরকারের তিনজন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা এবং ৪১ ধারার ৪ উপদফা সংশোধন করে শিক্ষার্থী ফি সরকারের অনুমোদনে করার প্রয়োজন বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

একই ধারার ৫ উপদফা সংশোধন করে বিভিন্ন খাতে সৃষ্ট সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ‘সরকার কর্তৃক অনুমোদিত’ লিখতে হবে।

এদিকে ইউজিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি টেকনিক্যাল কমিটি সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের পাশাপাশি অন্যান্য কমিটিতেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে আলোচনা করে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো সুবিধা ও জনবলের ভিত্তিতে টিউশন ফি নির্ধারণ করে সরকারের অনুমোদন নিতে আলোচনা হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ডাটাবেজ তৈরি করে ইউজিসির নজরে এনে এর বাইরে সনদ দেওয়ার সুযোগ বন্ধের প্রস্তাব করা হয়।

অতিরিক্ত সচিব হেলাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আইনের দুর্বল দিকগুলো সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপন করা হবে। আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে, শর্ত পূরণে ব্যর্থ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্যকালে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যারা নিজস্ব ক্যাম্পাসে এখনও যায়নি, একাধিক ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের জন্য সরকার এক বছর সময় বেঁধে দিয়েছে।

আইন অমান্যকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তারা আইন অনুসারে সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে না পারলে এক বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে দেশে ৮৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সাত বছর পার করেছে তাদের গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চুতর্থ দফায় সময় বেঁধে দেয়।

সরকারের এ নির্দেশনা মেনে সাত বছর ধরে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে এমন ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৭টি সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে, ২৭টি আংশিক স্থানান্তর করেছে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
এমআইএইচ/এটি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।