জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ইংরেজি বিভাগে প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় ১০, দ্বিতীয় বর্ষে ২০ ও তৃতীয় বর্ষে ২৩ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। এদের মধ্যে যথাক্রমে ৫ জন, ১৩ জন ও ১৭ জন শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই শিক্ষকরা বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য করিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে, বিভাগের শিক্ষকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বই না পড়ার জন্য মৌখিক পরীক্ষায় কোনো উত্তর দিতে পারছে না। ফলে, তারা অকৃতকার্য হয়েছেন।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ৯ মাস ১০ দিন পর চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, ৯৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৩ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন ১৭ জন। এছাড়া মৌখিকসহ এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন ৩ জন এবং শুধুমাত্র এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন আরও ৩ জন।
গত বছর ১৭ জানুয়ারি ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায় প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন ১৩ জন। এছাড়া মৌখিকসহ এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন ২ জন এবং এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন আরও ৫ জন।
এদিকে, গত ৩১ জানুয়ারি ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফলে দেখা যায় ৭৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। এ মধ্যে শুধুমাত্র মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন ৫ জন। এছাড়া মৌখিকসহ এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন ১ জন এবং এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন আরও ৪ জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘উইকেন্ড মাস্ট্রাস’ নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন শিক্ষকরা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষকরা তাদের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে আমাদের অকৃতকার্য করে দেন।
বিভাগের এক শিক্ষক বলেন, বিভিন্ন কোটায় যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে তারাই অধিকাংশ ফেল করছে। ইংরেজি পড়ার জন্য যাদের কোনো যোগ্যতা নেই, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত কোটা সিস্টেমের মাধ্যমে ভর্তি হয়। তারা ভাইভা বোর্ডে কোনো পারফর্ম করতে পারে না। তাদের উন্নতির জন্য ১ম বর্ষ থেকে গাইড লাইন দেওয়া হলেও তারা পড়াশোনায় মনযোগী হয় না। এমনকি ক্লাসেও উপস্থিত থাকে না।
অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিক উল্লেখ্য করে তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আহমেদ রেজা বলেন, শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট টেক্সট বই পড়ছে না। শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান নোট বই পড়ে এসে পরীক্ষা দিচ্ছে। ফলে, মৌখিক পরীক্ষায় তারা কোনো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে না।
বিভাগীয় সভাপতি তানিয়া শারমীন বাংলানিউজকে বলেন, ইংরেজি বিভাগে মৌখিক পরীক্ষায় ফেল এটি কোনো নতুন বিষয় নয়। এটি ইংরেজি বিভাগের কালচারে পরিণত হয়ে গেছে। যেহেতু ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়। যেহেতু ভাইভা বোর্ডে গিয়ে ইংরেজিতে কথা বলতে না পারায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী ফেল করে।
তাছাড়া আমরা চাই না আমাদের শিক্ষার্থীরা চাকরি কিংবা অন্যকোনো ভাইভা বোর্ডে গিয়ে ইংরেজি বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করুক। তাই তাদের যোগ্যতার মাধ্যমে তারা যেন পাস করতে পারে সেদিকেই আমরা নজর দেই।
বাংলাশে সময়: ০২৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
পিসি