ঢাকা: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ন্যূনতম মানদণ্ডের অনুমোদন দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
খুদে শিক্ষার্থীদের শেখানোর ক্ষেত্রে শিক্ষক কীভাবে যোগাযোগ করবেন, স্কুল ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, সহশিক্ষা কার্যক্রম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে মানদণ্ডে।
পাশাপাশি স্কুল পরিদর্শন ও মূল্যায়নে কার্যকারিতা এবং অভিভাবক সম্মেলনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
মানদণ্ডের আলোকে শিক্ষা সেবা প্রদান করে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে এ মানদণ্ড অর্জন করার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।
মানদণ্ডের ৩৭টি ক্ষেত্র ও উপাদান উল্লেখ করে এ সংক্রান্ত পত্রটি স্কুলে সংরক্ষণেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
‘শিক্ষক শিশুর সঙ্গে যোগাযোগের সময় তাদের চোখে চোখ রাখবেন, নরম সুরে কথা বলবেন, শালীনভাবে অঙ্গভঙ্গি করবেন এবং শিশুদের সঙ্গে সহজবোধ্যভাবে কথা বলবেন, সম্মান প্রদর্শন করে’- বলা হয়েছে মানদণ্ডে।
সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকার মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি অবস্থিত হতে হবে উল্লেখ করে মানদণ্ডে বলা হয়েছে, স্কুলের প্রাঙ্গন হবে পরিস্কার, সমতল ও জলাবদ্ধতামুক্ত। শ্রেণিকক্ষের বাইরে খেলাধুলার জায়গা এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য কমপক্ষে ২৫০ বর্গফুট শ্রেণিকক্ষ ও তার পরিবেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হবে।
প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, বসার জায়গা রাখা, পানি ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক ঝুঁকিমুক্ত এবং স্কুলে ফাস্ট এইড কিট বক্স রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে স্কুলে সকল উপকরণ সরবরাহ ও সংরক্ষণ, শ্রেণিকক্ষে সৃজনশীল কাজ প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা এবং শিখন কার্যক্রমের সময়সীমা হবে সর্বোচ্চ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত।
ইতিবাচক নিয়মানুবর্তিতা হিসেবে শারীরিক বা মানসিক কোনো শাস্তি না দিয়ে বা নেতিবাচকভাবে শিক্ষার্থীদেরকে নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে না রাখার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিবাদন ও উৎসাহ প্রদান করার ওপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে, অভিবাদন একটি দৈনন্দিন চর্চার বিষয় হিসেবে দেখা হবে। শিক্ষক শিশুদেরকে যেকোনো উপলক্ষে প্রশংসা করবেন এবং উৎসাহ প্রদান করবেন।
শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বলা হয়েছে, শিশুরা ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষকের সঙ্গে তাদের অনুভূতি, সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা ও শিখন চাহিদার কথা শেয়ার করবে।
প্রতি শ্রেণিতে একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রাখা ছাড়াও শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কদের প্রশিক্ষণের জন্যও মানদণ্ডে বলা হয়েছে।
খেলার ধরন সম্পর্কে মানদণ্ডে বলা হয়েছে, বার্ষিক পরিকল্পনা ও শিখনক্রম অনুসারে শিশুর শারীরিক, স্থুল ও সুক্ষ্ম পেশীর সঞ্চালনসহ জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এমন খেলা নির্ধারণ করতে হবে। খেলা নির্ধারণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন সৃজনশীল, কল্পনার খেলা ও ইচ্ছেমতো খেলার সমন্বয় থাকে। শিক্ষকরা খেলাধুলায় সহায়তা করবেন।
অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার সুযোগ, নেতৃত্বের উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের মোট সময়ের অর্ধেক নানা কাজ ও কথা যেমন- প্রশ্ন করা, ব্যাখ্যা চাওয়ায় নিয়োজিত রাখতে বলা হয়েছে। একক ও দলীয় কাজগুলো কীভাবে করা হবে তাও মানদণ্ডে রাখা হয়েছে।
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, নিয়মের মধ্যে না থেকে আগ্রহমূলক শিক্ষা ছাড়াও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নমনীয় হয়ে শেখাতে হবে।
হাজিরা খাতা আপডেট থাকা, শিক্ষার্থীদের মাসিক স্বতন্ত্র মূল্যায়ন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে মাসে একবার স্কুল পরিদর্শন ও রিপোর্ট প্রদান, বছরে কমপক্ষে ছয়টি অভিভাবক সভা করার কথাও বলা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রণীত এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত কারিকুলামের আলোকে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেখন-শেখানো সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। মূল উপকরণ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে পৌঁছাবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর জানায়, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’র আলোকে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি চালু করা হয়।
ইতোমধ্যে ৩৭ হাজার ৬৭২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে প্রাক-প্রাথমিক বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, অবশিষ্টগুলোতে প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ২০১০ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হলেও মানদণ্ড ছিল না, এখন প্রণীত হয়েছে। এর মাধ্যমে স্কুলগুলো ন্যূনতম মানদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।
২০১৪ সাল থেকে স্কুলগুলোর জন্য নতুন কারিকুলাম চালু করা হয়েছে বলেও জানান মাহফুজুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ০০১১ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর