ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

৬৭ শতাংশ নারীই বাল্যবিয়ের শিকার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৬
৬৭ শতাংশ নারীই বাল্যবিয়ের শিকার

ঢাকা: দেশের ৬৭ শতাংশ নারীরই বিয়ে হয়েছে তাদের বয়স আইনত ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে। শিক্ষার হারের সঙ্গে এ বিষয়টির সংশ্লিষ্টতা প্রগাঢ়।

বেশি শিক্ষিত মেয়েদের তুলনায় কমশিক্ষিত বা অশিক্ষিত মেয়েদের বাল্যবিয়ের হার তিনগুণ বেশি।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পপুলেশন সায়েন্স এবং ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের (ইউএনএফপিএ) যৌথ এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সোমবার (২৮ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ গবেষণা প্রকাশ করা হয়।

ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) অর্থায়নে ‘কনটেক্সট অব চাইল্ড ম্যারেজ অ্যান্ড ইটস ইমপ্লিকেশনস ইন বাংলাদেশ’ বিষয়বস্তুর ওপর গবেষণা চলে। এদিন প্রকাশিত তথ্যগুলো গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ের ফল বলে তারা জানান।

দেশে বাল্যবিয়ে রোধের লক্ষ্যে এর কারণ ও পরিস্থিতিগুলো গবেষণায় উঠে এসেছে। ১৪টি জেলার চিত্রে বাল্যবিয়ে রোধে মেয়েদের শিক্ষার অপরিহার্যতা ধরা পড়ে গবেষণায়।

গবেষণা ফল প্রকাশের এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।

গবেষণার ফল তুলে ধরেন ডিপার্টমেন্ট অব পপুলেশন সায়েন্স এর সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন।

এতে বাংলাদেশে ইউএনএফপিএ’র অফিসার-ইন-চার্জ আয়োরি কাতো, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, গবেষণা সংশ্লিষ্ট বিভাগের চেয়ারপারসন ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর ড. মো. আমিনুল হক ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাইনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

গবেষণায় এসেছে, দেশের বিবাহিত নারীদের ৬৭ শতাংশই ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। মেয়েদের শিক্ষাই দেশে বাল্যবিয়ে বন্ধের চাবিকাঠি হতে পারে।

ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মেয়েদের শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। এ শিক্ষা শুধু তাদের পারিবারিক মর্যাদা বাড়ানোর নিছক লক্ষ্যে হলে চলবে না, সত্যিকার সমৃদ্ধির জন্য তাদের পড়ালেখা করতে হবে, জ্ঞানার্জন করতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাল্যবিয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ তালিকার বেশ উপরের স্থানে। বাল্যবিয়ের কারণে মেয়েদের পড়ালেখা বাধাগ্রস্ত হয়। বাল্যবিবাহিতাদের ঝরে পড়ার হার দেড়গুণ বেশি। শুধু তাই নয়, বাল্যবিয়ের শিকার নারী এতোটাই স্বাস্থ্যসমস্যায় থাকেন যে, তারা মাতৃত্বের ঝুঁকিতে পড়েন।

ড. মো. আমিনুল হক বলেন, শিশুমৃত্যুতেও রয়েছে বাল্যবিয়ের চরম প্রভাব। পাঁচ বছরের আগে যেসব শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের হার এক দশমিক আট গুণ বেশি হয়েছে মায়ের বাল্যবিয়ের কারণে।

আয়োরি কাতো বলেন, জেন্ডার সংবেদনশীল বিষয় পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে, কারণ এটি সামাজিক চলমান ধারার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। মেয়েদের শিক্ষা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করলে বেশ ভালো কাজ হবে। এদেশের  মেয়েরা অল্প বয়সেই মাতৃত্বের সক্ষমতা অর্জন করে। তাই তাদের এসব বিষয়ক প্রয়োজনীয় জ্ঞান পারিবারিকভাবেও দিতে হবে।

গবেষণা বলছে, বাল্যবিবাহিতারা পরিবার পরিকল্পনার বিভিন্ন পদ্ধতিতে শারীরিকভাবে স্বস্তি পান না। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই বেশিরভাগ মেয়ের গর্ভে সন্তান আসে। নিজের ও সন্তানের যত্ন নিতে পারেন না সঠিকভাবে। ফলে দু‘জনেই ক্ষতিগ্রস্ত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৬
এসকেএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।