ঢাকা: পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি আগামীতে আরও কমিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তার কথা বিবেচনা করে পরীক্ষার সময়সূচি আরও কমিয়ে আনার জন্য কাজ করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
রোববার (০৩ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে এইচএসসি পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে একথা বলেন নাহিদ।
সূচি অনুযায়ী, এইচএসসি ও সমমানের তত্ত্বীয় (লিখিত) পরীক্ষা আগামী ০৯ জুন শেষ হবে। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা ১১ জুন শুরু হয়ে শেষ হবে ২০ জুন।
দীর্ঘ সময় পরীক্ষা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদেরও প্রশ্ন। আমরা পরীক্ষা দীর্ঘায়িত করতে চাই না। আমার মত, আমরা এসব পরীক্ষা খুব বড় জোর ৫-৬ দিনের মধ্যে নিতে চাই, সেই পথে আমরা আগাবো।
‘আমি যদি এই কথা এখনই বলি, সমস্ত অভিভাবকরা বিস্মত হয়ে যাবেন এবং আমাকে সবাই চেপে ধরবেন, এটা কি করে সম্ভব? তারা কোনো পরিবর্তন চান না। আমরা পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে গেলে এসব বাধা কনভিন্স করেই যেতে হবে’।
নিজের পরীক্ষার অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি, পাঁচদিনে ১০ পেপার। সকাল-বিকাল দুইটা পরীক্ষা দিয়েছি, মাঝে গ্যাপ। এখন দু’দিন গ্যাপ দিলেও অভিভাবকরা সন্তুষ্ট না’।
তিনি বলেন, গ্যাপ দিয়ে যে শিক্ষার্থীদের টেনশনের মধ্যে রাখা হয়, এখনও আমরা সেটা অভিভাবকদের উপলব্ধির মধ্যে আনতে পারিনি। যার ফলে অভিভাবকদের, দেশবাসীকে বোঝনোর চেষ্টা করছি, যাতে আস্তে আস্তে আমরা পরীক্ষার পদ্ধতি পরিবর্তন করে ফেলব। এ পদ্ধতিতে তিন মাস নষ্ট হয়, সময় নষ্ট হয়। শুধু কি কোচিং বাণিজ্য? বিরাট সময় নষ্ট হয়। ক্লাস হয় না এই সময়ে, ভর্তির সময় দেরি হয়ে যায়।
‘এজন্য আমরা পরীক্ষার সময়সূচি কমিয়ে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি। এ কাজটা সফলে সবার সাহায্য-সহযোহিতা লাগবে। দীর্ঘ পরীক্ষা অর্থহীন। যাচাই করে নিতে হবে যে, প্রকৃত জ্ঞানটা অর্জন করতে পেরেছে কি-না। যা এসএসসি ও এইচএসসি লেভেলে হওয়া উচিত, সে রকম পদ্ধতি বের করতে হবে। এই লম্বা পদ্ধতি চলবে না। এখনই আমরা পারবো না’।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। যারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারে, তাদের কঠিন নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
‘ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হতো। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সম্ভাবনা নেই। এখন এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি, গুজবও রটেনি। কারণ, গুজব রটালে তার বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে সেটা তারা ধারণও করতে পারবে না’।
মন্ত্রী বলেন, কিছু শিক্ষক এমন সব পথ গ্রহণ করছেন যা শিক্ষক সুলভ নয়, তারা শিক্ষক নামের কলঙ্ক। আমরা হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, দয়া করে কোনোভাবে অর্থের বিনিময়ে, লোভ-লালসার বিনিময়ে জীবন নষ্ট করবেন না। আগে বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা ছিল। সেখানে আমরা নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস বা প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব রটালে ১৪ বছরের জেল ও এক কোটি টাকা জরিমানা করা হবে। কাউকেই ছেড়ে দেবো না।
প্রতি বছরের মতো এবারও পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে এবার তিনি হলের ভেতরে যানিনি।
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে যে সহিংসতা হয়েছে, তাতে পরীক্ষায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলেও উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ করেই পরীক্ষার সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন কোনো পরীক্ষা নেই।
আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে এবার ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ জন পরীক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। গত বছরের তুলনায় এবার এক লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৪ জন বেশি শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন পরীক্ষায়।
এবার মোট অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৫৪ হাজার ১১৪ জন ও ছাত্রী ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৪ জন।
আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে ১০ লাখ ২০ হাজার ১০৯ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে ৯১ হাজার ৫৯১ জন, কারিগরি বোর্ডের অধীনে এক লাখ ২ হাজার ১৩২ জন ও ডিআইবিএসে (ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্ট্যাডিজ) ৪ হাজার ৭৯৬ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৬
এমআইএইচ/ওএইচ/এএসআর
