ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

পাঠ্যবই সহজ করার দাবি বিশেষজ্ঞদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৬
পাঠ্যবই সহজ করার দাবি বিশেষজ্ঞদের ছবি: নূর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি, এমসিকিউ বাতিল, পাঠ্যবই সহজ করা, পাঠদান পদ্ধতি ও ক্লাস রুমকে সৃজনশীল করার পাশাপাশি গাইড বই ও কোচিং বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেন তারা।

 

 
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শিক্ষামন্ত্রণালয় আয়োজিত মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় শিক্ষাবিদরা এসব দাবি জানান।
 
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন-  অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, ড. ফরাস উদ্দিন, অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ, সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।
 
একটি সেন্ট্রাল কোয়েশ্চেন ব্যাংক তৈরির পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, সৃজনশীল না বুঝার কারণে শিক্ষকরা ঝুঁকছেন গাইড বইয়ের দিকে। শিক্ষার্থীদেরকেও তারা বুঝাতে পারেন না। অভিভাবক ছুটছেন কোচিং সেন্টারের দিকে। প্রাইভেট টিউটরের দিকে।
 
তিনি বলেন, সব শিক্ষক ভালো বুঝবেন, পড়াবেন, প্রশ্ন করবেন এটা সম্ভব না । এ প্রশ্ন ব্যাংক থেকেই পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবে। শিক্ষর্থীরা দিক নির্দেশনা পাবে। অভিভাবকের ছুটাছ‍ুটি বন্ধ হবে।
 
এমসিকিউ প্রশ্নের কুফল তুলে ধরে তিনি এমসিকিউ কে ১৫ নম্বরে নামিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দুই বা তিন বাক্যে প্রশ্ন করতে হবে। এমসিকিউ বাদ দেয়া গেলে আরো ভালো হয়।
 
পরীক্ষার মাধ্যমে অযোগ্যদের ঝেড়ে ফেলার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে সবাই পাস করছে। যে পরীক্ষা দিচ্ছে সেই পাস করার ফলে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে জনমনে অনাস্থা দেখা দিয়েছে। সাধারণের প্রশ্ন সবাই পাস করলে পরীক্ষা নেয়ার কী দরকার?
 
অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার তিনটি ভিত্তি হলো. শিক্ষক, বই এবং পরীক্ষা।   শিক্ষকের বিষয়টি নিয়ে আমি কিছু বলবো না। কারণ এদিক দিয়ে আমরা খুবই দুর্বল। জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় হলে ভালো শিক্ষক পাওয়া সম্ভব হবে।
 
সহজ পাঠ্যবই প্রণয়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, পাঠ্য বই সহজ হওয়া উচিত। যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে। আমাদের বই লেখার পদ্ধতি ভালো না। নবম শ্রেণির বিজ্ঞানের বই আমি নিজে বুঝে উঠতে পারিনি। বাচ্চারা কীভাবে বুঝবে। বই যত্ন নিয়ে তৈরি করতে হবে।
 
পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন জাফর ইকবাল।
 
স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরনের গ্রেডিং পদ্ধতি অবলম্বনের কথা বলেন তিনি।
 
প্র্যাকটিকেলের ২৫ নম্বর সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কী না এ বিষয়টি যথাযথভাবে যাচাই করার কথাও বলেন তিনি।
 
এমসিকিউ প্রসঙ্গে তিনি একবাক্যে বলেন, এমসিকিউ তুলে নেওয়া উচিৎ। এর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।
 
ড. ফরাস উদ্দিন বলেন, কারিকুলাম ভারি হয়ে গেছে। দেখা গেছে নবম শ্রেণির পড়া, একাদশে আবার অনার্সে পড়ানো হচ্ছে। এতে করে এক পড়া তিন চার জায়গায় পড়ানো হচ্ছে। যার কোনো প্রয়োজন নেই। বেসিক বিষয়গুলো যুক্ত করে বাড়তি বিষয় বাদ দেওয়া উচিৎ।
 
কওমি মাদ্রাসার মূলকারিকুলাম ঠিক রেখে সরকারি অর্থায়নে তাদের  আধুনিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান ফরাজ উদ্দিন।
 
সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সহজ পাঠ্য বই তৈরির বিষয়ে কাজ চলছে। সৃজনশীলকে আরো চমৎকার করা ক্ষেত্রে আপনাদের মুল্যবান মতামত আমাদের সাহায্য করবে। আমরাও চেয়েছি এমসিকিউ বন্ধ করতে আপনাদের পরামর্শে সে কাজটি আরো ত্বরান্নিত হবে। ২০১৭ সালে এমসিকিউতে ১০ নম্বর কমনো হবে।
 
শিক্ষা পেশায় সম্মানি বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষা পেশায় মেধাবীদের আনতে সরকার আন্তরিক ভাবে কাজ করছে।
 
এসময় তিনি প্রশ্ন ব্যাংকের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান।
 
সভায় আলোচিত বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
 
দীর্ঘ এ মতবিনিময় সভায় শিক্ষার মানোন্নয়ন ও প্রসারের বিভিন্ন মতামত উঠে আসে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৬/আপডেট ১৭৪৮ ঘণ্টা
এমইউএম/বিএস

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।