ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাথমিক সমাপনী তুলে দিলে বৃত্তি পাবে না শিক্ষার্থীরা!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৬
প্রাথমিক সমাপনী তুলে দিলে বৃত্তি পাবে না শিক্ষার্থীরা!

ঢাকা: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা তুলে দেওয়া হলে শিক্ষার্থীদের কোন পদ্ধতিতে বৃত্তি দেওয়া হবে বা বৃত্তি পাবে কিনা- তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
 
সমাপনী পরীক্ষা তুলে দিতে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও এখন বৃত্তির বিষয়টি মাথায় রেখে এ বছর সমাপনী পরীক্ষা হবে কিনা- তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।


 
প্রাথমিক বৃত্তি ও সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সুস্পষ্টভাবে কিছু জানাতে পারছে না।  
 
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বুধবার (০৮ জুন) নিজ দপ্তরে বাংলানিউজকে জানান, সমাপনী পরীক্ষার এখনও অনেক দেরি। পরীক্ষা বন্ধ করতে সময় লাগবে না।
 
তিনি বলেন, আমরা যদি অক্টোবরে বলে দেই পরীক্ষা হবে না, তাহলেই হলো। সমাপনী পরীক্ষা তুলে দিয়ে বাচ্চাদের মঙ্গল হলে আমাদের অসুবিধা নেই।
 
আগে পঞ্চম শ্রেণিতে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও ২০০৯ সালে প্রাথমিক ও পরের বছর ইবতেদায়ী সমাপনী চালুর পর থেকে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকেই বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
 
নভেম্বর মাসের শেষ দিকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা নিচ্ছে সরকার। যাতে অংশ নেয় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী। এর আগে বৃত্তির জন্য পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার পর আলাদা পরীক্ষা নেওয়া হতো।
 
প্রাথমিক সমাপনী উঠে গেলে কীভাবে বৃত্তি দেওয়া যায় তা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
 
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ মনে করেন প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা উঠে গেলে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হবে।
 
সচিবালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উঠে গেলে বৃত্তি দেওয়া নিয়ে নতুন সমস্যা সৃষ্টি হবে।
 
এ বছরের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান সচিব।
 
তিনি বলেন, পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা না হলে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বৃত্তি দেওয়া হবে কীভাবে?
 
প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ৩১ মে সাংবাদিকদের সে কথা জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী।
 
২০০৯ সাল থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা।
জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে গত ১৮ মে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করে সরকার।
 
প্রাথমিক সমাপনীর ফলের ভিত্তিতে বৃত্তি দিয়ে আসছে সরকার।
 
গত বছর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ মিলে ৮২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এর আগে ৫৫ হাজার শিক্ষার্থী বৃত্তি পেত।
 
বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন
পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দিতে বিভিন্ন মহলও দাবি করে আসছেন।
 
এ বছরই সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে মানববন্ধন সমাবেশ করেছেন অভিভাবকেরা।
 
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক নাসরিন আক্তার, মলয় সরকার, শিরিন হোসেন, সালমা আক্তার, জিয়াউল কবির দুলু, ঝর্ণা আক্তার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
 
প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাকে শিক্ষার্থীদের শৈশব ধ্বংসকারী পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করে তারা বলেন, এ পরীক্ষা চালুর মাধ্যামে শিক্ষার মান উন্নয়ন করা কিংবা শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ব্যাপারে আগ্রহী করে গড়ে তোলা- কোনো উদ্দেশ্যই সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
 
তারা বলেন এ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের ধারা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। ভালো ফলাফলের আশায় অভিভাবকরা সন্তানকে কোচিং-প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়াচ্ছেন। নোট-গাইড বইয়ের ওপর ব্যাপক নির্ভরশীলতা বেড়েছে। আর এ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অভিভাবকদেরও নাভিশ্বাস উঠছে।  
 
পাশাপাশি যে বয়সে শিক্ষার্থীদের জানার কৌতূহল মেটানোর কথা- সেই বয়সে কোমলমতি শিশুরা পরীক্ষার চাপে পিষ্ট। শিশু শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সময় পাচ্ছে না। ফলে শারীরিক-মানসিক বিকাশ হচ্ছে না। মরে যাচ্ছে কোমল মন-অনুভূতি। শিশুদের আনন্দময় শৈশবও হারিয়ে যাচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।