ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিক্ষা

নেতা অসুস্থ, টাকা তুলতে গণস্বাক্ষর জালিয়াতি শেকৃবিতে

শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৬
নেতা অসুস্থ, টাকা তুলতে গণস্বাক্ষর জালিয়াতি শেকৃবিতে

ঢাকা: রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ২৩১৯ জন সাধারণ শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর জাল করে তাদের বৃত্তির প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের তিন নেতার বিরুদ্ধে। এক নেতার অসুস্থতায় চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়ে ওই অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন তারা।

 

অভিযুক্ত তিনজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান ও শামীম হাসান এবং নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায়। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীস দাসের অনুসারী বলে পরিচিত।

 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ৩০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বাবুর চিকিৎসার সাহায্য চেয়ে উপাচার্য বরাবর আবেদন করেন সংগঠনটির ওই তিন নেতা। আবেদনপত্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী তাদের বৃত্তির টাকা থেকে দুইশ’ টাকা সাহায্য করতে সম্মত হয়েছেন উল্লেখ করে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি তালিকা দেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতি ছয়মাস পরপর ১২শ’ টাকা করে বৃত্তি পেয়ে থাকেন। এই বৃত্তিরই টাকা থেকে ‘সাহায্য’ তুলতে আবেদন দেন ওই তিন ছাত্রলীগ নেতা।

স্বাক্ষরের সত্যতা যাচাইয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক গত ৪ জুন একটি বিজ্ঞপ্তি দেন। সেখানে ‘স্বাক্ষরকারী’ শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ করে তাদের সম্মতি দেওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। এতেই ফাঁস হয় জালিয়াতির বিষয়টি

দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত ২ হাজার ৩শ’ ১৯ শিক্ষার্থীর স্বাক্ষর দিয়ে প্রত্যেকের বৃত্তির টাকা থেকে ২০০ টাকা করে সর্বমোট ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৮০০ টাকা উত্তোলনের আবেদন করা হয়েছে। অথচ স্বাক্ষর দেওয়া দূরের ব্যাপার, বিষয়টি জানতেনই না শিক্ষার্থীরা।

জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক বাংলানিউজকে জানান, শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমরা একটি অভিযোগ গঠন করে শিগগির রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠাবো।

স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টি স্বীকার করে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বাবু বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার কারণে আমার চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ হচ্ছে। তাই ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। তবে এ নিয়ে আমি খুব ভোগান্তি পোহাচ্ছি। টাকা উত্তোলনের এ বিষয়ে রোববার (১৯ জুন) সিদ্ধান্ত নেবো।

এ বিষয়ে স্বাক্ষর নকলকারী ছাত্রলীগ নেতা আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের দম্ভ করে বলেন, ক্যাম্পাসে টাকা তোলা এটাই নতুন নয়। সবসময় এভাবেই কাজটি হয়ে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, কে অসুস্থ, কাকেই বা সাহায্য করতে হবে, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। আমাদের স্বাক্ষর নকল করা হয়েছে, শুধু এটা জানি। যারা এ কাজ করেছে তাদের উপযুক্ত বিচার আশা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল হক বলেন, স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি ছাত্রলীগ কখনো সমর্থন করে না। বিষয়টি জানার পর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখায় যোগাযোগ করে টাকা তোলার বিষয়টি বাতিল করতে বলেছি

এদিকে, গণস্বাক্ষর জালিয়াতি নিয়ে কথা বলে মারধরের শিকার হয়েছেন এক শিক্ষার্থী। গত বুধবার কাউসার মিয়া নামে চতুর্থ বর্ষের ওই শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলা হলের ছাত্রলীগের কিছু কর্মী।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।