থাকার মধ্যে আছে শুধু ‘নেই নেই রব’!
লাইব্রেরিটিতে নেই পর্যাপ্ত বসার জায়গা। ছাত্রদের জন্য রিডিং রুম নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন ভবনের ৬ষ্ঠ তলার একটি ফ্লোরে চলছে লাইব্রেরির কার্যক্রম। এর প্রবেশের মুখেই রয়েছে ছোট একটি টোকেন কাউন্টার। শিক্ষার্থীদের ব্যাগ, নিজেদের বই-খাতাসহ অন্যান্য জিনিস এখানে রেখে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। লাইব্রেরীর ভেতরের একটি কর্নারে রয়েছে ক্যাটালগ বক্স। সেখান থেকে পড়ার বিষয়, গ্রন্থ ও লেখকের নাম লিখে সংশ্লিষ্ট লাইব্রেরি সহকারীকে দেওয়ার পর দেখা যায় কাঙ্ক্ষিত বইটি পাওয়া যাচ্ছে না। পাঠকক্ষটি আবার প্রবেশপথের কাছে হওয়ায় কর্মকর্তাদের নিজেদের মধ্যে চলমান কথাবার্তায় ব্যবহারকারীদের পাঠে মনোনিবেশে বিঘ্ন ঘটে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ৩৮টি বিভাগ রয়েছে। এসব বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি। এত সংখ্যক শিক্ষার্থীর তুলনায় গ্রন্থাগারটি অনেক ছোট। জায়গার অভাবে অল্প জায়গায় অনেক শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। এজন্য স্বতন্ত্র গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে গ্রন্থাগারটির আসন সংখ্যা মাত্র ৩৫০টি।
বর্তমানে লাইব্রেরিতে বই আছে ২৮ হাজারের বেশি, রেফারেন্স বই প্রায় ৩০০০, দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যায় ১৩টি। এদের মধ্যে ৪টি সংরক্ষণ করা হয়। জার্নাল আছে প্রায় ২,৫০০টি। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই আছে প্রায় ১০০০।
এছাড়া ই-লাইব্রেরির একটি কক্ষে শিক্ষকদের জন্য ৭টি কম্পিউটারের মধ্যে তিনটিই নষ্ট। লাইব্রেরির অন্য কক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য ২৩টি কম্পিউটারের মধ্যে ৯টি অচল। আর ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও হাতে গোনা।
বর্তমানে লাইব্রেরিতে স্থায়ী জনবল আছে ১০ জন। এদের মধ্যে ৫ জন অফিসার পদে আছেন। আর দৈনিক ভিত্তিতে আছেন ১৫ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি মানের জনবল।
ডেইলি বেসিসে এ নিয়োগ পাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রতিদিনের জন্য মজুরি পেয়ে থাকেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের চাকুরি স্থায়ী করার আশ্বাস দিয়েছেন!
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই গ্রন্থাগারে। এ ছাড়া ফটোকপি মেশিন না থাকার কারণে গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের কপি করতে পারছেন না বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। গ্রন্থাগারটির সার্বিক উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো নজর নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী সিদ্দিক বলেন, ‘পুরো ষষ্ঠ তলা গ্রন্থাগারের জন্য বরাদ্দ ছিল। কিন্তু গত বছরের ২৯ মে গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষের একটি অংশ অস্থায়ীভাবে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে এক সেমিস্টারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। এতে গ্রন্থাগারটি আরো ছোট হয়ে যায়। স্থানের অভাব থাকায় গ্রন্থাগারের মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, পত্রিকা পাঠ, রেফারেন্স বইয়ের কার্যক্রম একটি কক্ষেই হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় আমাদের দাবি হচ্ছে, একটি আলাদা বিল্ডিং প্রতিষ্ঠা করে সেখানে স্বতন্ত্র গ্রন্থাগার চালু করতে হবে। ’
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম ছাত্র সংগঠনগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির পরিসর বৃদ্ধির জন্যে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। কিন্তু কার্যত কোনো ফলাফলই পাচ্ছে না তারা। তবে এর আগে আন্দোলনের মুখে লাইব্রেরি সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টার পরিবর্তে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
লাইব্রেরির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক মো. এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আসলে আমাদের আইটি সেক্টরের লোক কম থাকায় নষ্ট কম্পিউটারগুলো ঠিক করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমরা ভালো সার্ভিস দেওয়ারই চেষ্টা করছি। নিজস্ব জেনারেটরের ব্যবস্থা করার জন্য প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন। ’
প্রতিবছর কত টাকার বই কেনা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি কোনো বই কিনে না। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগকে টাকা ভাগ করে দেওয়া হয় তারা নিজ নিজ বিভাগের সেমিনারের জন্যে বই কিনে আমাদের জন্য কিছু দেয়। যা আমরা সংরক্ষণ করে রাখি। তবে এ বছর প্রায় ১৮ লাখ টাকার বই কেনার একটি টেন্ডার আমরা চূড়ান্ত করেছি। আমরা যদি আরো বেশি বরাদ্দ পাই তো লাইব্রেরিকে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করব। ’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ভিসি ড. মীজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আমরা দেশের প্রথম অনলাইন লাইব্রেরি চালু করেছিলাম। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে একটি আধুনিক লাইব্রেরিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছি। এ বছর আমরা টেন্ডারের মাধ্যমে বই কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
ডিআর/জেএম