প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন না করায় প্রগতিশীল শিক্ষকদের তোপের মুখে রয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী। তাদের অভিযোগ উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর ছত্রছায়ায় পার পেয়ে যাচ্ছেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান।
তারা আরো জানান, অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী উপাচার্যের চেয়ারে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বলে আসছেন ‘আসকারী থাকলে দুর্নীতি থাকবে না। দুর্নীতি থাকলে আসকারী থাকবে না’।
উপাচার্যের মেয়াদের এক বছরে একাধিকবার নিজের কথার প্রতিফলনও দেখিয়েছেন তিনি।
উপাচার্যের চেয়ারে বসে দুর্নীতির বিবুদ্ধে বিভিন্ন সময় সরাসরি অ্যাকশন নিতে দেখা গেছে অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীকে। নারী কেলেংকারী, নিয়োগবাণিজ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর চুরি, প্রকৌশল অফিসের দুর্নীতি এবং টেলিফোন অফিসের দুর্নীতির বিরূদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেন তিনি।
এমনকি ১০০ টাকা ঘুষ গ্রহণের দায়ে এক কর্মচারীকে শাস্তি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনন্য নজির স্থাপন করে সকলের মন জয় করে নেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী।
কিন্তু গত ক’দিন ধরে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে প্রক্টরের নিয়োগ-বাণিজ্য সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরও উপাচার্য রহস্যজনক নীরব ভূমিকা পালন করে আসছেন। প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বহরও বেশ লম্বা।
এসবের মধ্যে আছে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ডেকে হুমকি দেওয়া, ডিবিকে বিতর্কিত করা, হাওয়াই গাড়ি নিয়ে অনিয়ম এবং সর্বশেষ নিয়োগসংক্রান্ত অডিও ফাঁস।
এ সকল অভিযোগের মধ্যে শুধুমাত্র অতিরিক্ত তেল ব্যবহার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এ তদন্ত কমিটি নিয়েও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন প্রগতিশীল শিক্ষকনেতারা। সর্বশেষ নিয়োগবাণিজ্য সংক্রান্ত অডিও ফাঁসের বিষয়ে প্রশাসনের নিশ্চুপ ভুমিকা পালনে শিক্ষকনেতারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এ নিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ এবং বিরূপ মন্তব্য করতে দেখা যায়।
এর আগে নিয়োগবাণিজ্য সংক্রান্ত অডিও ফাঁসের অভিযোগে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনকে শাস্তি দেয়া হয়। অথচ নিয়োগবাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচিত ‘ব্রেনওয়াশ’ নামক অডিও ফাঁসের সাতদিন পরও একটা তদন্ত কমিটি পর্যন্ত গঠন করা হয়নি।
জানা যায়, এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরপরই প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান নিজেই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন। ফাঁসকৃত অডিওর কথোপকথনটি তার নিজের বলেই স্বীকার করে নেন তিনি। তবে তিনি দাবি করেন, তিনি নিয়োগ-বাণিজ্যে জড়িত নন।
প্রক্টর এ বিষয়ে এক প্রতিবাদ লিপি দেন। তাতে তিনি বলেন, ‘কোনো নিয়োগ বোর্ডে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের দলীয় আনুগত্য ও গ্রুপের প্রতি আনুগত্য নিশ্চিত করার জন্য প্রার্থীদের সাথে কাউন্সেলিং করা হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকদের সঙ্গে যে কথা হয় তার অডিও ক্লিপ থেকে তুলে ধরে সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে। ’
প্রতিবাদলিপিতে অডিও ক্লিপটি নিজের বলে তিনি যে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এ নিয়ে চলছে সমালোনার ঝড়। প্রগতিশীল শিক্ষকরা মনে করেন, প্রক্টর তার নিজের স্বীকারোক্তি দিয়ে তিনি নিজেই ফেঁসে গিয়েছেন। যেখানে সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়া স্বয়ং উপাচার্য পর্যন্ত শিক্ষক নিযোগের ব্যাপারে কিছু বলার এখতিয়ার রাখে না, সেখানে নিয়োগের ৩০ মিনিটের মধ্যে নির্বাচিত প্রার্থীদের সাথে কিভাবে তিনি দলীয় কাউন্সিলিং করেন? কাউন্সেলিংয়ের সাথে ব্রেনওয়াশের কি সম্পর্ক?
এ নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিদের নীরব সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। পাশাপাশি উপাচার্যের নীরবতার কারণে এতোদিনকার অনিয়মবিরোধী যে ইতিবাচক ভাবমূর্তি আছে, সেটিও ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে মনে করেন প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের একাধিক নেতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও শাপলা ফোরামের কয়েকজন শিক্ষকনেতা জানান, ‘কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য প্রতিষ্ঠানের ইমেজ সংকট সৃষ্টি হওয়াটা প্রত্যাশিত নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমার সময়ের না। আর আমি অডিও ক্লিপটি এখনো হাতে পাইনি। তবে কোনো অপরাধই তামাদি হয় না। সুতরাং এবিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৭
জেএম