সোমবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক।
নির্বাচনী তফসিল অনুসারে দু’টি ভোটকেন্দ্রে (কলা ও মানবিক অনুষদ এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদ) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ করা হবে।
ঢাকায় ভোটকেন্দ্র না হওয়ায় অনেক গ্রাজুয়েট ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। তারপরে দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর নির্বাচন হয়নি। ১৯৯৮ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দু’টির একটি ক্যাম্পাসে ও অন্যটি ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে ছিলো বলে রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে।
একাধিক রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট বাংলানিউজকে বলেন, ‘সর্বশেষ নির্বাচনেও ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি ভোটকেন্দ্র দেওয়া হয়েছিলো। সেখানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে আসা গ্রাজুয়েটরা ভোট দেন। কিন্তু কি কারণে এবার ঢাকায় ভোটকেন্দ্র দেওয়া হচ্ছে না তা আমাদের কাছে অস্পষ্ট’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সভাপতি মো. শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগীয় পর্যায়ে ভোটকেন্দ্র করে ভোটগ্রহণ করতে পারে, সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার ভেতরে একটি কেন্দ্র দিতে পারবে না কেন?’
একইসঙ্গে গ্রাজুয়েটদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।
কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যারা ঢাকার বাইরে থাকেন, তাদের জন্য সময় বের করা কঠিন হয়ে যায়। তবে ঢাকায় একটি কেন্দ্র থাকলে একটি দিন ব্যয় করে খুব সহজেই তারা ভোট দিতে পারেন। ক্যাম্পাসে এসে ভোট দেওয়া অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। সময়ের কারণে অনেক গ্রাজুয়েট দেখা যাচ্ছে, ভোট দিতে এলেন না। তারা মতামত প্রকাশ করা থেকে বঞ্চিত হলেন’।
জাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম সৈকত অভিযোগ করেন, বিএনপিপন্থী ৩০ জন রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েট নির্দিষ্ট সময়ে ফরম ও টাকা জমা দেওয়ার পরেও তাদেরকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বিএনপিপন্থী ও ছাত্রদলের রেজিস্টার্ড গ্রাজুয়েটরা যেন ক্যাম্পাসে এসে ভোট দিতে না পারেন, সেজন্য কেন্দ্র ক্যাম্পাসের ভেতরে করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি’।
একইসঙ্গে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতি বলেন, ‘আমরা এমন এক পর্যায়ে অবস্থান করছি যে, এসব বিষয়ে কথা বললে নির্বাচন বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চাই, যেকোনো উপায়ে নির্বাচনটি হোক। দীর্ঘদিনের নির্বাচন না হওয়ার রেওয়াজ ভেঙে যাক। তাই নির্বাচনের স্বার্থে কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হলেও সে বিষয়ে কথা না বলাই ভালো’।
এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল গ্রাজুয়েটদের একটি প্যানেল এবং ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টের ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও প্রগতিশীল গ্রাজুয়েট মঞ্চ’ নামের আরেকটি প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়গুলো নিয়ে কেউ আমাকে মৌখিক বা লিখিতভাবে কিছু জানাননি’। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিকিউরিটি তো রয়েছেই’।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
এএটি/এএসআর