বছরের প্রথম দিন সোমবার (১ জানুয়ারি) সকালে সারা দেশে একযোগে উদযাপিত বই উৎসবে বই পাওয়া থেকে বাদ যায়নি রাবেয়া। খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার পুটিমারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সে।
বাবা নেই রাবেয়ার। মা লাভলি বেগম দিনমজুর খেটে মেয়েকে পড়ালেখা করাচ্ছেন। তারা বটিয়াঘাটার মাথাভাঙ্গা গ্রামের সরকারি খাস জমিতে ঘর তুলে থাকে।
রাবেয়া বলে, এবার ৬টি বই নতুন পেয়েছি। বছরের প্রথম দিন স্কুল থেকে নতুন বই পেয়ে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই পড়তে বসেছি। নতুন বইয়ের ছবি দেখতে ও পড়তে মজা লাগছে।
রাবোর মা লাভলি বেগম বলেন, আমাগে অভাবের সংসারে প্রায় দিনই কেরোসিন থাহে না। ঠিকমতো কুপিও জ্বলে না। এরপরও কুপির আলোতে পড়ে মেয়েডা ভালো করছে। সকালে বই পাওয়ার পর থেকে বই নিয়েই পড়ে আছে।
তিনি আরও বলেন, পোলাপানের মধ্যে এহন ঈদের আনন্দের জোয়ার বইছে। সরকার বছরের প্রথম দিনই তাগের হাতে বিনা টাহায় বই দেওয়ায় আমরা খুশি।
লাভলি বেগমের প্রতিবেশী আশরাফুল ইসলাম মশিউর বলেন, আমার ছেলে সাহেদ আহমদ ৫ম শ্রেণিতে আল আমিন একাডেমি থেকে নতুন ৬টি বই পেয়েছে। সন্ধ্যা হওয়ার আগে থেকে বই নিয়ে পড়ে ঘর মাতিয়ে তুলেছে।
বছরের প্রথম দিন ছেলে-মেয়েদের হাতে নতুন বই দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান স্থানীয় দোকানদার মশিউর।
তিনি জানান, কাজিবাছা নদীর পাড়ের মাথাভাঙ্গা গ্রামের খাস জমির ভূমিহীন পল্লীতে ১৭শ’ ভোটার রয়েছেন। ২-৩ শ’ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ আছে। বাকিদের ঘরে বিদ্যুৎ নেই। এখানে যদি বিদ্যুৎ থাকতো তাহলে ছেলে-মেয়েরা আরও ভালো করতো।
সোমবার সন্ধ্যায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার কাজিবাছা নদীর পাড়ের মাথাভাঙ্গা ভূমিহীন পল্লীতে গেলে অন্ধকারের ভেতর থেকে নতুন বই পড়ার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। শিশু-কিশোররা কুপি জ্বালিয়ে নতুন বই পড়ায় ব্যস্ত সময় পার করছে। ঘরে ঘরে লেগেছে বই পড়ার ধুম। পাশাপাশি যাদের ঘর তারা সবাই কেরোসিন সাশ্রয়ের জন্য এক জায়গায় এসে পড়ছে।
সাহেদ বলে, নতুন বইয়ের মলাটে অনেক সুন্দর ছবি আছে। যা দেখতে ভালো লাগছে। ঝকঝকে চকচকে নতুন বই পেয়ে আমি আগেই কবিতা পড়ছি। তারপর অন্যগুলো পড়বো।
ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর হাতে সরকার বছরের শুরুতেই বই তুলে দেওয়ায় আভিভাবকরাও সন্তুষ্ট। তারা বলছেন, সন্তানের হাতে নতুন বই দেখে আমরাও ভীষণ খুশি। আমাদের শিক্ষাজীবনের গল্প ছিল ভিন্ন। বছরের শুরুর দিনে নতুন বই কেউই পাইনি। তখন আগের ক্লাসের বই পরের ক্লাসে দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। অথবা অভিভাবকরা পুরানো বই কিনে দিতো। কিন্তু এখন দিনবদলে গেছে। বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাচ্ছে।
দক্ষিণ লবণচরা রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রোটারিয়ান মোসলেহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, স্কুলে নতুন বই বিতরণের এ উৎসবকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস, আনন্দ। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করবে। আমাদের সময় এমন বই উৎসব ছিলো না।
নতুন বই হাতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিনেই পড়াশোনা শুরু করতে পারবে এবং এতে তাদের ফলাফল আরও ভালো হবে বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৬০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৮
এমআর/এমজেএফ