ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ভালোবাসা দিয়েই সব প্রতিকূলতা জয় করবো: জাবি উপাচার্য

নুর আলম হিমেল, জাবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৮
ভালোবাসা দিয়েই সব প্রতিকূলতা জয় করবো: জাবি উপাচার্য জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম/ছবি: বাংলানিউজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ক্যাম্পাসে এমন অনেক পরিস্থিতি বিভিন্ন সময় তৈরি হয়েছে যে, অনেকে ভেবেছে আমি নারী হয়ে সেগুলো মোকাবেলা করতে পারবো কি না? এসব ঘটনায় আমি অত্যন্ত ধৈর্য্য, সাহস ও দক্ষতার সঙ্গে সমাধান করেছি। ধমক দিয়ে কাজ আদায় করার যে পুরুষালী প্রথা ছিল তা ভেঙে দিয়ে সবসময় ভালোবাসা দিয়ে কাজ আদায় করে নিয়েছি।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন বাংলাদেশের প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম

আনুষ্ঠানিকভাবে শুক্রবার (০২ মার্চ) দ্বিতীয় মেয়াদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।

বাংলানিউজ: কেমন আছেন?

উপাচার্য: সব মিলিয়ে মোটামুটি ভালো আছি।

বাংলানিউজ: দায়িত্ব গ্রহণের ৪ বছর পূর্ণ হল। কেমন লাগছে?

উপাচার্য: খুবই ভালো লাগছে। এজন্য ভালো লাগছে যে, বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে প্রথম মেয়াদের দায়িত্বভার শেষ করতে পেরেছি। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হই তখন জাবিতে সংকট ছিল। প্রশাসনের সহযোগিতা-অসহযোগিতা ছিল। অস্থিতিশীলতা ছিল। ছিল অনিশ্চিয়তা। অবশেষে সবার সহযোগিতায় জাবিকে সুন্দর পরিবেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি, সেটি ভেবে আনন্দ হচ্ছে।

বাংলানিউজ: নারী হিসেবে দায়িত্বপালন করতে গিয়ে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?

উপাচার্য: নারী হিসেবে আলাদা করে কোনো প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়েছে এমন নয়। সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছে। কিন্তু এমন অনেক পরিস্থিতি বিভিন্ন সময় তৈরি হয়েছে যে অনেকেই ভেবেছে আমি সেগুলো মোকাবেলা করতে পারবো কি না? প্রতিকূল পরিস্থিতি যাই থাকুক না কেন, সব সময়ই সততা আর অসততার মধ্যে সততাই জিতে যায়। আমি সেটা প্রমাণ করতে পেরেছি।

বাংলানিউজ: চার বছরে উল্লেখযোগ্য কিছু সফলতা?

উপাচার্য: শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয় শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে কাজ করেছি। গত ৪ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা, শিক্ষার পরিবেশ তৈরি, ১৯ বছর ধরে বন্ধ থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন দেওয়া, নতুন দু’টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা এবং ১০টি নতুন বিভাগের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবলের ব্যবস্থা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ডিপিপি তৈরির অংশ হিসেবে ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে থ্রিডি মাস্টারপ্লান প্রণয়ন করেছি। যার ভিত্তিতে ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প একনেক- এ চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন, শিক্ষকগণের জন্য মাসিক গবেষণা ভাতা বৃদ্ধি, শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউজিসি থেকে গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের (যেমন: চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কোরিয়া ও যুক্তরাজ্য)  সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। এছাড়া পরিবহন সংকট নিরসনের জন্য নতুন এসি বাস ক্রয় এবং চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য লাইব্রেরিতে সিট সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে।  

বাংলানিউজ: নেতৃত্বের ক্ষেত্রে নারী সমাজের অনেক অগ্রগতি হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কি নারী সমাজের উন্নতি ঘটেছে?

উপাচার্য: সংখ্যাগত দিক বিবেচনা করলে হয়তো দেখা যাবে উন্নতি ঘটেছে। যেমন আগে মেয়েরা লেখাপড়া করতে পারতো না, কাজকর্মে অংশগ্রহণ করতে পারতো না, রাস্তাঘাটে চলাচল করতে পারতো না। কিন্তু এখন মেয়েরা এসব করতে পারে। আর এই পারার কারণে পরিমাণগত পরিবর্তনটা স্বীকার করতে হবে। কিন্তু গুণগত পরিবর্তনটা এখনো হয়নি। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এখনো স্বামী দ্বারা স্ত্রী নির্যাতিত, পিতা দ্বারা কন্যা বঞ্চিত বা ভাইয়ের দ্বারা বোন লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। তবে অতীতের তুলনায় বর্তমানে এসবের হার কমেছে। নারীরা এখন পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কর্মক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করছে। তবে এখনো তো নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।

বাংলানিউজ: নারী নির্যাতন বন্ধে কি করণীয় বলে আপনি মনে করেন?

উপাচার্য: প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মেয়েদের আইন ও নীতিমালা তৈরি করতে হবে, মেয়েদের প্রতি পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। এগুলো বিষয়ে আমি আশাবাদী। কিন্তু যখন গার্মেন্টসের মেয়েরা রাতে একা বা দু’জন হেঁটে বাড়ি ফেরে তখন কিন্তু যেকোনো  মুহূর্তে তার উপর বিপদ নেমে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে একটা সমাধান হলো রাস্তায় আলোর ব্যবস্থা করতে হবে, যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করতে হবে যেন মেয়েরা নিরাপদে আসা-যাওয়া করতে পারে। আরেকটি সমাধান হতে পারে মেয়েরা নিজেদের দাবি আদায়ে ছোট ছোট সংগঠন গড়ে তুলতে পারে। এরকম অনেকগুলো বিষয় তৈরি করতে হবে যার মাধ্যমে সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন করা যাবে।

বাংলানিউজ: ২য় বারের মত উপাচার্য হিসেবে আপনার আগামীর দিনের প্রত্যাশা কি?

উপাচার্য: সততা, নিষ্ঠা এবং পরিশ্রম এই তিনটা জিনিস দিয়ে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে আগলে রাখতে চেয়েছি। কারণ আমি প্রথমবার নিয়োগ পাওয়ার পর আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো আন্দোলনের মাধ্যমে সৃষ্ট অস্থিতিশীল বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থিতিশীল করা। এবার আমি চেষ্টা করবো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নতির শীর্ষে নিতে। সেভাবেই আমি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।

বাংলানিউজ: ধন্যবাদ আপনাকে।

উপাচার্য: বাংলানিউজকেও ধন্যবাদ।

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত বিশেষ সিনেট অধিবেশনে সিনেট কর্তৃক তিন জনের উপাচার্য প্যানেল মনোনয়নে ‘প্রথম’ হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ০২ মার্চ তিনি রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর কর্তৃক চার বছরের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।

ফারজানা ইসলাম ১৯৫৮ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস শরীয়তপুরে ভেদরগঞ্জ উপজেলায়। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।

পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে যোগ দেন এবং ২০০১ সালে সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি পান। নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৮
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।