এ ইস্যুতে বামধারার ছাত্রসংগঠনগুলো ‘প্রগতিশীল ছাত্রজোট’ ব্যানারে কঠোর আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ‘ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ’ও সরব হচ্ছে।
ডাকসু ও হল সংসদ গঠনতন্ত্রের ৮ (ই) ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক আবাসিক হলে একটি করে ভোটকেন্দ্র থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট হলের সদস্যরা কেবলমাত্র সেই ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন। দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর সংশোধনের জন্য পরিবেশ সংসদের উদ্যোগে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে। সেখানে ছাত্রলীগ ব্যতীত অধিকাংশ সংগঠন সুষ্ঠু নির্বাচন ও হলে নিরাপদে ভোট দেওয়া সম্ভব নয় উল্লেখ করে ভোটকেন্দ্র অনুষদভিত্তিক একাডেমিক ভবনে করার সুপারিশ দেয়। কিন্তু গত ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় সেটি অনুমোদন হয়নি।
পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ইস্যুতে তফিসল ঘোষণা করা হলেও নির্বাচনের আয়োজন করতে পারেনি তৎকালীন প্রশাসন। ক্ষমতার বাইরে থাকা ছাত্রলীগ তখন ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে রাখার দাবি জানায়। কিন্তু তৎকালীন ক্ষমতায় থাকা ছাত্রদল তখন হলে ভোটকেন্দ্র রাখার পক্ষে অবস্থান নেয় এবং এটিকে নির্বাচনে ছাত্রলীগের হেরে যাওয়ার ভয়ে ষড়যন্ত্র বলে বক্তব্য দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের পর ভোটকেন্দ্র ইস্যুতে ছাত্রসংগঠনগুলো আলাদা ও জোটগতভাবে তাদের অবস্থান তুলে ধরে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন স্বাক্ষরিত ছাত্রসংগ্রাম পরিষেদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘পোলিং বুথ হলের অভ্যন্তরে হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতবর্ষী ঐতিহ্য ও প্রথা। প্রতিষ্ঠিত প্রথা, আইনি অনুমোদন, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির নিশ্চয়তার আলোকে বলা যায়, পোলিং বুথ নিয়ে ন্যূনতম বিভ্রান্তির অবকাশ আছে বলে ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করে না।
ভোটকেন্দ্রের বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর নির্বাচনের তারিখ ঘোষিত হয়েছে। আমি চাইবো সবার ঐক্যমতের ভিত্তিতে ভোটকেন্দ্র নির্ধারিত হোক। অবস্থা যেদিকে যাচ্ছে বিষয়টি বড় ফ্যাক্টর হয়ে যাবে মনে হয়। এসব কারণে নির্বাচন স্থগিতও হতে পারে।
অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতারা। ছাত্রফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজির বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে করার দাবি জানাই। কর্তৃপক্ষের হাতে এখনো সময় আছে। না হয় আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। এরপরেও যদি প্রশাসন সাজানো নির্বাচন করতে চায়, তাহলে অংশ নেবো কি-না সেটা ভাবতে হবে।
ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ভোটকেন্দ্র হলের পরিবর্তে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে করার দাবি উপেক্ষা করে সিন্ডিকেট ছাত্রলীগের দাবি মেনে ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে করার সিদ্ধান্তে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হতাশ ও ক্ষুদ্ধ।
কর্তৃপক্ষের নেওয়া একপাক্ষিক, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সিদ্ধান্ত ছাত্রদল প্রত্যাখ্যান করছে। ভয়মুক্ত ,সন্ত্রাসহীন ও আস্থাশীল পরিবেশে নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনাও বুদ্ধিভিত্তিক সহযোগিতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং সব মত, সব ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের মতাদর্শের আস্থার পরিবেশ তৈরি করে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
তবে, এ ইস্যু নিয়ে গণভোটে গ্রহণযোগ্য সমাধান দেখছেন ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সংসদের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ভোটকেন্দ্র কোথায় হবে সেটা নিয়ে কর্তৃপক্ষ গণভোটের আয়োজন করতে পারে। সেখানে শিক্ষার্থীরা যে মতামত দেবে আমরা তা মেনে নেবো।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পদাক নাসির উদ্দীন প্রিন্স বলেন, প্রশাসন লোক দেখানো পরিবেশ সংসদের সভা করেছে। কোনো হলেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সাজানো ফর্মুলায় নির্বাচন আয়োজনের জন্য হলে ভোটকেন্দ্র করার সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে উপেক্ষা করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনা করবে। না হয় আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো।
অপরদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদও ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে রাখার দাবিতে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে। পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুখ হাসান বলেন, আমরা হলে ভোটকেন্দ্র না করার দাবি জানিয়েছিলাম। অন্যান্য ছাত্রসংগঠনও হলের পরিবর্তে একাডেমিক ভবনে কেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসন ছাত্রলীগের দাবি মেনে নিয়ে হলে ভোটকেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৯
এসকেবি/ওএইচ/