এতে করে দেড়ঘণ্টা পরে দুপুর সাড়ে ১২টার পরে বরিশাল-পটুয়াখালী সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে আন্দোলনের ১৪তম দিন সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল ১০টায় ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের নিচতলায় প্রধান ফটক আটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করে উপাচার্যর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে বৃষ্টি শুরু হলে তা উপেক্ষা করে কর্মসূচি চালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধের কারণে বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলা জেলার সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ বন্ধ থাকে। এ সময় সড়কের উভয় পাশে যানবাহনের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বাড়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। তবে কর্মসূচি চলাকালে রোগী ও শিক্ষার্থীদের বহনকারী যানবাহনসহ জরুরি কাজে নিয়োজিত গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, উপাচার্যের পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগেই মৌখিক আশ্বাসের আস্থার বিষয়টি হারিয়ে ফেলেছে।
তিনি বলেন, সড়ক অবরোধ কর্মসূচি বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তুলে নেওয়া হয়। পরে দুপুর ১টা থেকে মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুপুর ১টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার একটি আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে না পেলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
এদিকে এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে সাংবাদিকদের মোবাইলফোনে জানিয়েছেন ববির উপাচার্য ড. এস এম ইমামুল হক।
শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় আন্দোলন করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এসএম ইমামুল হক শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেয়। এর প্রতিবাদে জোরদার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
২৬ মার্চ থেকে তাদের লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বরাবর স্মারকলিপি প্রধান, ডিসি অফিস ঘেরাও, বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ, নিজেদের শরীরের রক্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালে লিখে ভিসির পদত্যাগ দাবি, ভিসির কুশপুতুল দাহ ও মশাল মিছিলসহ বিবিণ্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
এজন্য আন্দোলনের দু’দিনের মাথায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা হল না ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
পরবর্তীতে শনিবার (৬ এপ্রিল) বরিশাল সার্কিট হাউজে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ প্রশাসনিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাতে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত লিখিত এক নোটিশে রোববার (৭ এপ্রিল) সকাল থেকে ক্লাস ও পরীক্ষাসহ সব ধরনের কার্যক্রম চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা সে নোটিশ প্রত্যাখান করে উপাচার্যের পদত্যাগ বা ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি লিখিত আকারে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
অপরদিকে রেজিস্ট্রারের দেওয়া নোটিশের ওপর ভিত্তি করে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তারা একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে যেতে পারেননি। আর রোববারের মতো সোমবার সকালেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা একাডেমিক ভবনের সামনে এসে অবস্থান নিলেও প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় তারা ভেতরে ঢুকতে পারেনি।
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের কার্যক্রম চালিয়ে রাখলেও বাসগুলোতে আশানুরূপ শিক্ষার্থীর দেখা মেলেনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
এমএস/এএটি