ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় চরের একমাত্র আলোকবর্তিকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় চরের একমাত্র আলোকবর্তিকা

মাদারীপুর: মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার পদ্মার বুকে জেগে উঠা বিশাল একখণ্ড জনপদ চরজানাজাত, বন্দোরখোলা ইউনিয়ন। মূল ভু-খণ্ড থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন এই জনপদে আলোকবর্তিকা হিসেবে মাথা উঁচু করে আছে নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। 

মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের অবস্থিত এ বিদ্যালয়টি।

শিবচর উপজেলার বন্দোরখোলা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত পদ্মা নদীর চরে এই বিদ্যালয়টি যেন চরাঞ্চলের বাতিঘর।

চরের ছোট ছোট প্রায় ২৪টি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করছে। এই বিদ্যালয়ের কারণেই চরের ওই সব গ্রামে পৌঁছে গেছে শিক্ষা।  

লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে চরে বসবাসরত পরিবারের ছেলেমেয়েরা। এক সময়ে নদীতে মাছ ধরতে পাঠানো, চাষাবাদের কাজে লাগানো বা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে অর্থ উপার্জনের দিকে ঝুঁকে পড়া শিশু-কিশোরদের শৈশব কাটছে এখন বিদ্যালয়ে লেখাপড়া ও খেলার মধ্যে দিয়ে।

পরিবারগুলোও ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে শুরু করেছে। ফলে দিন দিন দুর্গম চরাঞ্চলে বাড়ছে শিক্ষিতের হার। মাধ্যমিক শেষ করে চরের ছেলে-মেয়েরা এখন উপজেলা শহরে গিয়ে কলেজেও লেখাপড়া করছে। মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও লেখাপড়া করছে বলে স্থানীয়রা জানান।

শিবচর উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নের মধ্যে একটি ইউনিয়নের নাম বন্দোরখোলা। এই ইউনিয়নের একটি বিরাট অংশ পদ্মা নদীর চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত। উপজেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের ছোট ছোট অসংখ্য গ্রাম নিয়ে বন্দোরখোলা ইউনিয়নের একটি অংশ। কয়েক শতক আগে পদ্মার জেগে উঠা চরে মানুষের বসতি শুরু হয়। সেই থেকে নদীর ভাঙা-গড়া নিয়েই চরের বাসিন্দাদের জীবন। এই চর এলাকার বেশির ভাগ মানুষই কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি প্রায় সব পরিবারই পশু পালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।  

এছাড়া অনেকে আবার নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। বর্তমানে চরাঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় নিরক্ষরতা দূর হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। চরে বেশ কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।  

জানা গেছে, চরের নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি গ্রামে ২০০৯ সালে স্থাপিত হয় নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি। বন্দোরখোলা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে স্থাপিত এই বিদ্যালয়টির কারণে শিবচর উপজেলার বন্দোরখোলা ইউনিয়নের মমিন উদ্দিন হাওলাদারকান্দি. জব্বার আলী মুন্সীকান্দি, বজলু মোড়লের কান্দি, মিয়া আজম বেপারীর কান্দি, রহমত হাজীর কান্দি, জয়েন উদ্দিন শেখ কান্দি, মসত খাঁর কান্দিসহ প্রায় ২৪টি গ্রাম ও ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলার চর নাসিরপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ছেলে-মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চরের এই বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের সবাই চরের বাসিন্দা। মূল ভূ-খণ্ড এখান থেকে বেশ দূরে হওয়ায় চরের ছেলে-মেয়েরা অন্যত্র গিয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পেতো না। এই বিদ্যালয়টি হওয়ার কারণে এখন চরের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। চরের ছোট ছোট প্রায় ২৪টি গ্রাম থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এখানে লেখাপড়া করতে আসে। বিদ্যালয়টিতে দশ জন শিক্ষক ও তিন জন কর্মচারী রয়েছে। প্রতি বছর জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হচ্ছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, ‘চরের খেটে খাওয়া মানুষের ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে। লেখাপড়া শিখতে পারছে। এটাই বড় কথা। এই চরে যখন স্কুল ছিল না, তখন বৃহৎ এই চর পাড়ি দিয়ে দূরে গিয়ে লেখাপড়া করা সম্ভব ছিল না এই এলাকার ছেলে-মেয়েদের। এখন ঘরের কাছে স্কুল হওয়ায় লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। এসএসসি পাশ করে কলেজে পড়ছে এই চরের অসংখ্য ছেলে-মেয়ে।  

বন্দোরখোলা ইউনিয়নের কাজির সূরা এলাকার বাসিন্দা মো. বাবু শেখ বলেন,‘ নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টির বয়স খুব বেশি না হলেও ইতোমধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে চর এলাকায়। লেখাপড়ার মান বৃদ্ধিতে নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন শিক্ষকরা। আর এই স্কুলটির কারণেই চরের ছেলেমেয়েরা হাইস্কুলে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। তা না হলে বেশির ভাগই প্রাথমিক শিক্ষা পর্যন্তই থাকতো। স্কুলটি এই চরের লাইট হাউস! শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবজাল হোসেন জানান,‘স্কুলটি শিবচরের মূল ভূ-খণ্ড থেকে দূরে অনেকটা দুর্গম এলাকায় অবস্থিত। এর ঠিক পেছনেই অল্প কিছুটা দূরে পদ্মা নদী। চরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। আর চর এলাকার ছেলে-মেয়েরাই এই স্কুলের প্রাণ। স্কুলটি চরের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দিতে পারছে। আমরা নিরলস ভাবে মানসম্মত লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। ’

তিনি আরো জানান, পদ্মার খুব নিকটবর্তী হওয়ায় বিদ্যালয়টি এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। আগামী বর্ষায় টিকবে কিনা তা বোঝা যাচ্ছে না। আমরা ইতোমধ্যে পদ্মা থেকে নিরাপদ দূরত্বে একটি জায়গাও নির্ধারণ করে রেখেছি বিদ্যালয়টির জন্য। যাতে করে চরের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত না হয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।