শুক্রবার ও শনিবারের (১০ ও ১১ জানুয়ারি) নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার পর ভিসিসহ কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) মধ্যরাতে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি অফিস আদেশ জারি করে এই নিয়োগপরীক্ষা স্থগিত করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা দপ্তর থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন বিভাগ/দপ্তর/শাখায় নিয়োগের লক্ষ্যে পূর্বঘোষিত ১০ ও ১১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখের কর্মচারী নিয়োগ ২০১৯ এর সব পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হলো। পরীক্ষার পুনঃনির্ধারিত সময়সূচি যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়া হবে। কর্তৃপক্ষের আদেশক্রমে এ অফিস আদেশ জারি করা হলো। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১২টা ৯ মিনিটে জরুরি নির্দেশনা অংশগ্রহণকারী পরিক্ষার্থীদেরও মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিয়োগের আগেই অনিয়মের অভিযোগ এনে এবং অন্যান্য ইস্যুতে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মচারীরা। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্বতা ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
এদিন বিকেল থেকে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে ভিসি, প্রক্টরসহ শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অবরোধ করে রাখেন। রাতে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের পর আন্দোলকারীরা স্থান ত্যাগ করেন।
গত বছর ১৮ জুন প্রকাশিত ৯৩ জন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী পরিষদ কর্মচারীদের পর্যায়োন্নয়ন নীতিমালা দ্রুত সংশোধন, অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের অতিসত্বর কার্ড ইস্যু করা, শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মচারীদের উচ্চতর পদে পদায়ন, অতিসত্বর ইমিগ্রেশন কমিটি গঠন, হাউজ লোন দ্রুত বাস্তবায়ন করা, কর্মচারীদের পোশাক ভাতা দ্রুত বাস্তবায়ন ও কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষা চালু করলে পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়োগের ক্ষেত্রে পরীক্ষা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসনের কাছে বরাবর দাবি জানান কর্মচারী পরিষদের নেতারা।
এ নিয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার কর্মবিরতি ও আন্দোলনে নামেন তারা। গত ৬ জানুয়ারি কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মো. ছানারুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম অন্যান্যদের নিয়ে সভায় এ সিদ্ধান্ত নেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশ কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তাদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে পৃথক দাবি জানান।
সিকৃবি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা কেন শোষণের শিকার হবেন। ১৯৪৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন। একই আদর্শ লালন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্মচারীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. শামীম মোল্লা কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ প্রার্থী হয়ে মৌখিক পরিক্ষা দিলেও সিন্ডিকেটে তার চাকরি বাতিল হয়। অন্যদের চাকরি হলেও তার চাকরি কেন বাতিল হয়, এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে জবাব চেয়েও পাননি তারা।
ছাত্রলীগের দাবি, ২০২০ সালে মুজিববর্ষ সারা বাংলাদেশে উদযাপন করার পরিকল্পনা থাকলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কেনো কর্মসূচি না নিয়ে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার দিন ধার্যের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।
এ বিষয়ে প্রক্টর সোহেল মিয়া ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মিঠু চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়েও আশানুরূপ উত্তর পাননি বলে অভিযোগ করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এজন্য প্রক্টর কার্যালয় ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে তারা উভয়ের পদত্যাগ দাবি করেন। অবশ্য বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নিয়োগ পরিক্ষা স্থগিতের মধ্য দিয়ে এ অবস্থার অবসান হয় এবং প্রশাসনিক ভবনের ফটকের তালা খুলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০২১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
এনইউ/এএটি