ঢাকা, সোমবার, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৯ জুলাই ২০২৪, ২২ মহররম ১৪৪৬

শিক্ষা

টিকা আমদানির আগে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুললে ঝুঁকি বাড়বে

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২০
টিকা আমদানির আগে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুললে ঝুঁকি বাড়বে

ঢাকা: কোভিড-১৯ বা নতুন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে বিগত পাঁচ মাস ধরে দেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শিগগিরই শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।

 

কিন্তু অভিভাবকরা বলছেন, টিকা আসার আগে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।

সরকারের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। তবে এতে থেমে নেই শিক্ষা কার্যক্রম। অনলাইনভিত্তিক পাঠদান চলছে। এখন অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া কথাও ভাবছে সরকার।

অভিভাবকরা বলছেন, এখনই খুলে দিলে লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন বেশি হতে হবে। এতে করোনা আক্রান্তের হার বাড়তে পারে।  

শিক্ষকরা বলছেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমেই পরীক্ষামূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে পারে। প্রথমেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক কোনো শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলা একেবারেই ঠিক হবে না। দেশের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশে রয়েছে শিশুরা। প্রাপ্তবয়ষ্ক শিক্ষার্থীরা নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারলেও শিশুরা এ বিষয়ে অনেক অবুঝ। এমন পরিস্থিতিতে নিজের সন্তানকে বাইরে বেরোতে দেওয়াই ঝুঁকিপূর্ণ।

কায়েশ ইসলাম এবং ইশান ইসলাম দুই ভাই মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৮ম শ্রেণি এবং ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুইজনই মা-বাবার সঙ্গে যাত্রাবাড়ীতে থাকে।  

তাদের মা জাকিয়া ইসলাম জুথী বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। করোনার কোনো ভ্যাকসিন এখনো আসেনি। এই অবস্থায় সরকার যদি স্কুল-কলেজ খুলে দেয়, তবে ঠিক হবে না। আগে করোনা পরিস্থিতি কেটে যাক, দেশে যদি ভ্যাকসিন আসে, তারপর সরকার এই সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোতেও শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে।

আনোয়ার পারভেজ নামে এক শিক্ষার্থী বাবা বলেন, করোনার কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) পরীক্ষা পিছিয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা ছন্দপতনও হয়েছে। এরপরও করোনা পরিস্থিতি অনুকূল পরিবেশে না আসা পর্যন্ত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকাই উত্তম। এতে অন্তত শিশু শিক্ষার্থীরা এখনও নিরাপদে আছে।

ঢাকা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলামের মা সালেহা লাকী বাংলানিউজকে বলেন, আগে জীবন, তারপর পড়াশোনা। সন্তান বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলেই তো সে কলেজে যেতে পারবে। শিক্ষিত হবে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো অভিভাবকই চাইবে না যে তার সন্তান ঝুঁকি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাক। পাঁচ মাস বন্ধে শিক্ষার্থীদের যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। আরও কিছুদিন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে খুব বেশি ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি না।

করোনা পরিস্থিতিতে আমেরিকাতে পরীক্ষামূলকভাবে স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছিল। দেশটিতে প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়-এমন সংবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে এসেছে। তাই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা জরুরি বলেও মনে করছেন শিক্ষকরা।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. তৌফিকুল ইসলাম মিথিল বাংলানিউজকে বলেন, সরকার যদি পরীক্ষামূলকভাবে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলা উচিত। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তারা প্রাপ্তবয়স্ক। করোনা মোকাবিলায় তাদের যথেষ্ট শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা রয়েছে। এরপর কলেজগুলো খোলা যেতে পারে। এই দুটো পর্য়ায়ে শিক্ষার্থীদের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে করোনা আক্রান্ত বা শনাক্তের সংখ্যা নিন্মগমুখী হলে পরেই মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেখা যেতে পরে।

চলতি বছরের এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত থাকলেও করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ থাকায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে সবাই অবহিত। দেশের পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলে তার ১৫ দিনের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যাতে পরীক্ষার্থীরাও প্রস্তুতি নিতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২০
এসজেএ/ইইউডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।