ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২০
সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস শাবিপ্রবি

শাবিপ্রবি (সিলেট): দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সিলেটের বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)। ক্যাম্পাসের যেদিকে দৃষ্টি যায় সেদিকেই সবুজ অরণ্য।

১৯৯১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে শাবিপ্রবি। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবন, মেডিক্যাল, গ্রন্থাগার সব মিলিয়ে ছোটবড় প্রায় ১৮টি ভবন রয়েছে। ইট-পাথর দিয়ে নির্মিত এসব ভবনজুড়ে সবুজের ছায়া। বর্তমানে দু’টি প্রকল্পে আরও ২৪টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ভবনও পরিবেশবান্ধব করেই নির্মাণ করা হবে।

এ ব্যাপারে শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ বছর মোট ১৪ হাজার গাছ লাগিয়েছি, যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফলদ, বনজ ও ওষুধি গাছ রয়েছে। সামনের বছর আরও ১০ হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক সৌন্দর্য চোখে পড়ে। এখান থেকেই মূলত সবুজের হাতছানি শুরু। ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই রাস্তার দু’পাশে সারি সারি মেহগনি, কড়ই, জারুল, নারিকেল গাছ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রধান ফটক থেকে গোলচত্বর পর্যন্ত রাস্তার দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার, যেটি সবার কাছে ‘এককিলো’ নামে পরিচিত। এককিলো রাস্তার দু’পাশে অবস্থিত লেক ক্যাম্পাসকে আরও আকর্ষণীয় করেছে।

এককিলোর পূর্ব পাশে রয়েছে উপাচার্যের বাসভবন, ডরমেটরি, গেস্ট হাউস এবং পশ্চিম পাশে ইউনিভার্সিটি স্কুল ও কেন্দ্রীয় মসজিদ, ড. এম ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবন। এরপর গোলচত্বর ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। প্রতিটি স্থাপনা নানা প্রজাতির গাছপালায় ঘেরা।

পাহাড়ঘেরা সবুজ ক্যাম্পাসে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক মাঝখানে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ‘চেতনা৭১’।

সবুজ-শ্যামল এ ক্যাম্পাস সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখেন শিক্ষার্থীরা। তবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শাবিপ্রবি। শিক্ষার্থী, দর্শনার্থীসহ সবার প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে পুরো ক্যাম্পাসে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া অন্য কারো দেখা নেই। এই সুযোগে গোটা শাবিপ্রবি ভিন্ন রূপে সেজেছে। দীর্ঘদিন না কাটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানের ঘাস বড় হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন গাছে ফুটেছে নানা রঙের ফুল।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন এক্সপ্লোর সোসাইটির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আলমগীর তৈমুর বলেন, ‘প্রকৃতি রক্ষার্থে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিভিন্ন অ্যালামনাই, বিভাগ, সংগঠন নিজ নিজ উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ করে আসছে। তাছাড়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যও পরিবেশবান্ধব। তিনি আসার পর থেকে ক্যাম্পাসের নান্দনিক সৌন্দর্য আরও বেড়েছে। এতে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। তাই আমি সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাবো আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বাড়াতে ও রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে। ’

ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এর অধ্যাপক ড. এ. জেড. এম মনজুর রশীদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, গ্রিন হাউস ইফেক্ট মোকাবিলা করতে বৃক্ষরোপণই একমাত্র সহজ ও কার্যকরী উপায়। তবে কখনো যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে বৃক্ষনিধন হয়, এরপর আরও বেশি গাছ লাগানো উচিত। ’

ক্যাম্পাস ফলমূল ও ওষুধি বৃক্ষ রোপণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যদি অনেক ফলদ ও ওষুধি বৃক্ষ থাকে, তাহলে সেখানে পাখপাখালির উপস্থিতি থাকে বেশি। তখন সেখানে ক্ষতিকর পোকামাকড়ের উপদ্রুপও কম থাকে। তাই স্থানীয় পরিবেশ ও বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে বৃক্ষরোপণ পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। ’

অপরদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণার সুযোগ বাড়াতে, সেশনজট ও র‍্যাগিংমুক্ত করতে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। তার জন্য কোথাও চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখিনি। আগামীতেও এ ধারা চলবে। এ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে সহযোগিতা করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। ’

উপাচার্য বলেন, ‘আমরা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বর্তমান প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ২৪টি ভবন নির্মাণ করবো। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করেই এসব ভবন নির্মাণ করা হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজ আমরা কখনো করবো না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২০
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।