যশোর: বাবা পান ব্যবসায়ী। স্থানীয় সাপ্তাহিক হাটে ভ্রাম্যমাণ পানের দোকানে উপাজর্নে চলে সংসার।
তিনি এবার যশোর সরকারি মাইকেল মধূসুদন (এমএম) কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছেন। শুধু এইচএসসি নয় এর আগে পিইসি, জেএসসি, এসএসসি পরীক্ষায়ও গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছেন। কৃতিত্বের সহিত সব ধাপে ভালো ফলাফল অর্জন করলেও তার সেই স্বপ্নে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা।
কিশোর দেবনাথ যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের শালবরাট গ্রামের কেশব দেবনাথের ছেলে। তারা দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় কিশোর। ছোট ভাই স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনির ছাত্র। মা-বাবাসহ ৪ সদস্যের পরিবার তাদের।
কিশোর দেবনাথ বলেন, আমি পিইসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়েছি। আমি এবার মেডিক্যালে পড়তে চাই। সেখানে চান্স পাওয়ার জন্য কোচিং করছি। কিন্তু আমার বাবা কলেজে ভর্তি করে দিতে পারবে তো? ভর্তি করে দিলেও আমার বাবার পক্ষে আমার লেখাপড়ার খরচ যোগানো সম্ভব নয়। তাহলে দারিদ্রতার কাছে আমি কী হেরে যাবো? গোল্ডেন ‘এ’ প্লাস পেয়ে কী লাভ? মেডিক্যালে পড়া হবে কী আমার?
তিনি আরো বলেন, ‘বাবা এ পর্যন্ত ধার-দেনা করে পড়াশোনার খরচ দিয়েছে। প্রাইভেট পড়ারও তেমন সুযোগ পাইনি। নিজের চেষ্টায় ভালো রেজাল্ট করেছি। তবে, আমার স্বপ্ন এখনও অনেক দূর। ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই। জানি না সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা। ’
কিশোরের বাবা কেশব দেবনাথ বলেন, সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার বাঘারপাড়া হাটে পানের দোকানে আর দিনমজুরের কাজ করে ৪ সদস্যের সংসার চালাতে হচ্ছে। জমিও তেমন নেই। ছেলেকে ডাক্তার বানানোর ইচ্ছা আছে। তবে, ইচ্ছা থাকলেও সামর্থ নেই। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা সহযোগিতা করলে স্বপ্ন করতে পারবো বলে আশা করছি।
সরকারি মাইকেল মধূসুদন (এমএম) কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কিশোর একজন মেধাবী ছাত্র। অনেক কষ্ট করে সে ভালো রেজাল্ট করেছে। শুনেছি অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান সে। তার পরিবারে আর্থিক সংকটেও রয়েছে। তার স্বপ্ন পূরণে সবার এগিয়ে আসা উচিত। ’
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
ইউজি/এএটি