ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আগামী মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসার কথা রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহল থেকে আবেদন জমা পড়ছে। অনেকেই বর্তমান সীমানা বহাল রাখার আবেদন করেছেন। কেউ কেউ আবার আরও আগের সীমানা বহাল রাখার আবেদন জানিয়েছেন। তবে মৌখিকভাবে তদবির করলেও এমপিদের কেউ এখনও লিখিত আবেদন করেনি।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য প্রশাসনিক সুবিধা, ভৌগলিক অখণ্ডতা ও জনসংখ্যাকে বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে আইনে। এজন্য সম্প্রতি সব জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছে প্রশাসনিক পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছিল ইসি। সেই তথ্যও তারা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনও পায়নি ইসি।
সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর এ বিষয়ে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত আবেদন আহ্বান করিনি। তারপরও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দরখাস্ত দিচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যরা, রাজনৈতিক নেতরা যোগাযোগ করছেন। দুই রকম দরখাস্তই আসছে আমাদের কাছে। যেমন আজকেও একজন সংসদ সদস্য এসেছিলেন। উনি নিজ এলাকার পরিবর্তন চান না। গত পরশু একজন সংসদ সদস্য এসে বলেছেন উনি পরিবর্তন চান না। এরআগে একজন সংসদ সদস্য বলেছেন উনি উনার এলাকার পরিবর্তন চান।
ইসি মো. আলমগীর আরও বলেন, সীমানার পরিবর্তন চাওয়া এমপি বলেছেন, তার এলাকায় অন্য উপজেলার দুটি ইউনিয়ন দেওয়া আছে। ওই ইউনিয়নগুলো তার এলাকার না। ওই প্রশাসনিক এলাকার এমপি আলাদা। অথচ ওই এলাকা তার নির্বাচনী এলাকায় যুক্ত হয়ে গেছে। এটি চান না তিনি। ওই দুটি ইউনিয়ন তার নির্বাচনী এলাকা থেকে বাদ দিলে তিনি খুব খুশি হবেন বলে জানান ওই এমপি।
ইসি আলমগীর বলেন, আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনও পাইনি। তবে আমরা অপেক্ষা করতে পারব না। কেননা, জুনের মধ্যে আমরা সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করব। আমরা শূন্য থেকে কাজ শুরু করব। যারা পরিবর্তন করতে চান, তারা কেনো পরিবর্তন করতে চান তার জন্য শুনানি দিতে হবে। যেমন একজন এমপি বললেন তার এলাকা থেকে দুইটা ইউনিয়ন ছেড়ে দিতে চান। সেটি করতে হলে তো আরেকটি আসনে এই দুটি ইউনিয়ন দিতে হবে। এখন সেই আসনের এমপি এটি নিতে চান কি না সেটিও তো জানতে হবে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৫টির মতো আবেদন জমা পড়েছে। আবেদন করাদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, অ্যাডভোকেটও রয়েছেন। এরমধ্যে কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনেরর সীমানা নিয়ে পাঁচটির আবেদন জমা পড়েছে।
একটিতে বিদ্যমান কুমিল্লা- ১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) ও কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে আসন পুনর্নির্ধারণ এবং আরেকটি আবেদনে কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের বিদ্যমান সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলায় পুনর্নির্ধারণ চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া, হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে সংসদীয় আসনের পুনর্নির্ধারণ, বিদ্যমান কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা) এবং কুমিল্লা-২ (হোমনা ও তিতাস) উপজেলার পরিবর্তে সংসদীয় আসনের পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে নির্বাচনি এলাকা পুনর্নির্ধারণের আবেদনও পড়েছে ইসিতে।
অন্যদিকে, সিরাজগঞ্জ-১ ও ৫ আসন নিয়েও আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলায় সমন্বয়ের (বেলকুচি ও কামারকন্দ) ভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে পিরোজপুর-৩ আসনের (মঠবাড়িয়া উপজেলা) সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানা বহাল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দেওয়ার সময় শেষ হলে প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। এরপর দাবি, আপত্তি ও শুনানি শেষে চূড়ান্ত করা হবে সংসদীয় আসনের সীমানা।
প্রসঙ্গত, দশম সংসদ নির্বাচনের আগে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ৫০টি আসনে পরিবর্তন আনে। এরপর একাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে কেএম নূরুল হুদা কমিশন পরিবর্তন আনে ২৫টি আসনের সীমানায়।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৩
ইইউডি/এসএএইচ