ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

যে কারণে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার কাছে নৌকার পরাজয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
যে কারণে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার কাছে নৌকার পরাজয় নৌকার তানভীর হাসান ডালিম ও বিএনপি নেতা মো. রাসেল সিকদার (বাঁ থেকে)

পিরোজপুর: পিরোজপুরের নাজিরপুরে মনোনয়ন ত্রুটিতে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতার কাছে নৌকার পরাজয় ঘটেছে বলেছে দাবি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের।  

গত বৃহস্পতিবার (২৫ মে)  অনুষ্ঠিত এই উপ-নির্বাচনের ফলাফলে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, নির্বাচনে বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রাসেল সিকদার ৫ হাজার ৪৭২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তানভীর হাসান ডালিম পেয়েছেন ৪ হাজার ৫২৪ ভোট।

নৌকার এই ভরাডুবির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় আ.লীগ নেতাকর্মীরা।  

তাদের বক্তব্য, নির্বাচনের আগে দলের সবাই তাদের নিজেদের ভেতরে থাকা গ্রুপিং ভুলে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলেও তাতে ফল হয়নি। মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে যোগ্য ও জনপ্রিয়দের বাদ দিয়ে কৌশলে অযোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আ.লীগ মনোনীত তানভীর হাসান ডালিমের রাজনীতিতে উত্থান জেলা আ.লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি আউয়ালের হাত ধরে। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে এমপি থাকাকালে আউয়াল ও তার ভাইদের মধ্যে চরম গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হয়। তখন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে তানভীর হাসান ডালিম উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মোশারেফ হোসেন খানের পক্ষ হয়ে আউয়ালের মেজো ভাই পিরোজপুর পৌরমেয়র হাবিবুর রহমান মালেকের পক্ষে অবস্থান নেন। এতে ক্ষিপ্ত ছিলেন জেলা আ.লীগের সভাপতি। এ কারণে আউয়াল সমর্থকরা প্রকাশ্যে তানভীর হাসান ডালিমের পক্ষে প্রচারণা করলেও তাকে ভোট দেননি বলে অভিযোগ।  

আরও একটি কারণ জানিয়েছেন নৌকার কর্মীরা।

তাদের অভিযোগ, জেলা আ.লীগের সভাপতি আউয়াল সমর্থিত নাজিরপুর উপজেলা আ.লীগের সাবেক সহসভাপতি অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন খান ও সদর ইউনিয়ন আ.লীগের সভাপতি মো. সাইফুদ্দিন খান বাদশা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে গোপনে কাজ করেছেন।  

আরও যে কথা বলা হচ্ছে, এবারের উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল কান্তি বিশ্বাস। দলীয় অনুরোধে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নৌকার পক্ষে কাজ করলেও তার সমর্থকরা বিষয়টি মেনে নেয়নি।  

এছাড়া আউয়াল এমপি থাকাকালে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর হাসান ডালিম ও আউয়াল সমর্থিত একটি গ্রুপ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নৌকা সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। ওইসব নৌকা সমর্থিত প্রার্থীরা ডালিমের নির্বাচনে সুযোগ পেয়ে তার বিরুদ্ধে গোপনে কাজ করেছেন বলে দাবি তাদের।

এবারের উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এমন একজন নাজিরপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আফজাল হোসেন খান জানান,  নৌকার মনোনয়ন যোগ্যতা ও জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে দেওয়া হয়নি। আর এ কারণে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় ঘটেছে।

উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ বেপারী জানান, মনোনয়নের ব্যাপারে উপজেলা কমিটি তৃণমূলের মতামত নিয়ে জেলায় পাঠায়। জেলার সুপারিশে কেন্দ্র মনোনয়ন দিয়েছে। আর নির্বাচনের বিষয়ে কিছু লোক প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে প্রচারণা করে গোপনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করেছেন ও ভোট দিয়েছেন। এ কারণে নৌকার এমন পরাজয় ঘটেছে।

তবে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ আ.লীগ বিরোধীদের দাবি ভিন্ন। তাদের মতে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ায় ভোটাররা সুযোগ পেয়ে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। যা শাসকদলের জন্য একটি অশুভ সংকেত।

উল্লেখ্য, চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচিত মো. রাসেল সিকদারের বাবা মো. আনোয়ার হোসেন সিকদার ছিলেন ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।