বরিশাল: জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার হওয়া বরিশাল নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আদালতে নালিশি মামলা করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এক নেতা।
বুধবার (০৭ জুন) বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে নালিশি অভিযোগ দেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল মহানগরের ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক আরিফুর রহমান।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. ফারুক হোসেন নালিশী অভিযোগ তদন্ত করে কোতয়ালি মডেল থানার ওসিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে পিপি ইসতিয়াক হোসেন রুবেল জানিয়েছেন।
আনিছুর রহমান (আনিছ শরীফ) চলমান সিটি নির্বাচনে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শরীফ মো. আনিছুর রহমানবরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা বটে। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবত) এর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে শহরে সর্বজন স্বীকৃত।
আনিছুর রহমান গত ৪ জুন তার নিজ বাসভবনে বসে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন। ব্রিফিংয়ের সময় আনিছ শরীফ অভিযোগ করেন যে, ঢাকায় বসে হাতপাখাকে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এবং তার ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীমের সমর্থন দেখে বিবাদী তার অজ্ঞাত নেতাদের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে এবং হাতপাখার প্রার্থীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভ্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছেন। যা আনিছ শরীফের অনুসারী ও মিডিয়ার মাধ্যমে প্রথমে প্রকাশ পায় এরপর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও প্রার্থীর সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ বক্তব্যের কারণে সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তার মিথ্যা বক্তব্যে নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছে, ইসলামী আন্দোলনের রাজনৈতিক আদর্শে অন্যায় আঘাত করার কারণে সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্প্রীতি এবং সৌহার্দপূর্ণ ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বিশৃঙ্খল, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ঘোলাটে করে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থ সামাজিক অবস্থা নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে।
আসামি ইসলামী আন্দোলনের অনুভূতি ও মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় অপরাধ করেছে বলে বাদী তার নালিশি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন বলে জানিয়েছেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী নুরুল ইসলাম কাকন।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহামুদ তারিকের বিরুদ্ধে গত ৪ জুন সংবাদ সম্মেলন করেন শরীফ আনিছুর রহমান।
সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে হারাতে তার বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও তার ছেলে বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ হাত পাখাকে তিন কোটি টাকা দিয়েছে।
তার এ বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে ওই দিন রাতেই বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয় শরীফ আনিছুর রহমান।
ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মিডিয়া উপকমিটির সদস্য কে এম শরীয়তউল্লাহ বলেন, আমাদের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম একজন ক্লিন ইমেজের মানুষ। তার বিরুদ্ধে নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ আনিছুর রহমান মিথ্যা, ভিত্তিহীন যে অভিযোগ তুলেছে সেই বিষয়ে আমরা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছি। যার অনুলিপি আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার, পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে দিয়েছি। এরপর আমরা থানায় এসে ওসি সাহেবের কাছে মামলার জন্য লিখিত দিয়েছি।
তিনি বলেন, ৩ কোটি টাকা খেয়ে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার যে মিথ্যে ভিত্তিহীন কথা বলা হয়েছে, এখানে আমাদের ক্লিন ইমেজকে নষ্ট করার জন্য করা হয়েছে। এটা মানহানিকর এবং ষড়যন্ত্রমূলক। আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে আছি, সেটাকে নস্যাৎ করার জন্য তারা হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করেছে। আর তার বিরুদ্ধে আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা করার জন্য গতরাতে থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা গড়িমসি করায় আদালতেই মামলাটি দায়ের করি।
তবে থানায় দেওয়া লিখিত ওই অভিযোগটিতে ত্রুটি থাকায় সেটিকে সংশোধন করে আনার জন্য বলা হয়েছে বলে বুধবার (০৭ জুন) রাতে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. ফজলুল করিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ