চাঁদপুর: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন ১২ জন।
এদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রম এবং তার বড় ছেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী (দিপু)।
দুই উপজেলার আ.লীগ সমর্থকদের আশা, মায়া চৌধুরী অথবা তার ছেলে দিপু চৌধুরী এবার এই আসনে মনোনয়ন পাবেন।
মায়া চৌধুরী দীর্ঘদিন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অন্যদিকে দিপু চৌধুরী ছিলেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা।
মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হলেন সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) এবং তার বড় ছেলে সাজেদুল হোসেন চৌধুরী (দিপু)।
আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও জনসাধারণ জানান, চাঁদপুর-২ আসনে মায়া চৌধুরী এই আসনের একাধিক বারের এমপি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে মতলব সেতু নির্মাণ, মতলব উত্তর উপজেলা, মতলব পৌরসভা, ছেংগারচর পৌরসভা প্রতিষ্ঠাসহ ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করেছেন। বিশেষ করে মেঘনা-ধনাগোদা বাঁধ রক্ষায় ব্যাপক কাজ হয়েছে তার সময়ে। দুই উপজেলার সব গ্রামেই এখন পাকা রাস্তা। ছোট-বড় ব্রিজ-কালভার্ট হয়েছে অসংখ্য। প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বহুতল ভবন হয়েছে। এসব উন্নয়ন কাজের কারণে বৃহত্তর মতলববাসী বার বার মায়া চৌধুরীকে এমপি হিসেবে দেখতে চান।
একইসঙ্গে তার ছেলে দিপু চৌধুরীও এলাকায় বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে যুব সমাজের আইকন হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। বাবার সঙ্গে থেকে দিপু চৌধুরীও এলাকার উন্নয়নে সম্পৃক্ত থেকেছেন এবং জনসেবায় নিয়োজিত আছেন। মায়া চৌধুরী মন্ত্রী থাকা থাকাকালে এলাকার সর্বশ্রেণির মানুষকে সময় দিয়েছেন দিপু চৌধুরী।
জাতীয় রাজনীতিতে ব্যস্ত থাকলেও এলাকায় মায়া চৌধুরী ও তার বড় ছেলের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। গত ৫ বছর এমপি না থেকেও নিয়মিত এলাকায় এসেছেন এবং দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পাশে থেকেছেন মায়া চৌধুরী ও দিপু চৌধুরী।
গত এক বছর ধরে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় উন্নয়ন সমাবেশ ও শান্তি সমাবেশ করেছেন মায়া চৌধুরী ও দিপু চৌধুরী। এসব সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি জেলার অন্যান্য আসনের নেতাকর্মীদেরও অবাক করেছে। মায়া চৌধুরী ও দিপু চৌধুরীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লক্ষ্য করা গেছে এসব সমাবেশে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য আল-আমিন ফরাজী বলেন, মায়া চৌধুরীর হাত ধরে বৃহত্তর মতলবে যত উন্নয়ন হয়েছে এর আগে একশো বছরেও এত উন্নয়ন এখানে হয়নি। মায়া চৌধুরী যেসব উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে গেছেন গত ৫ বছরেও সেগুলো আলোর মুখ দেখেনি। তাই অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত করতে মতলবের মানুষ মায়া চৌধুরী অথবা তার ছেলে দিপু চৌধুরীকে এই আসনে এমপি হিসেবে দেখতে চায়।
মতলব দক্ষিণ উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য মিনহাজ উদ্দিন বলেন, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে যত বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প হয়েছে তার সবই করেছেন মায়া চৌধুরী। এ ক্ষেত্রে তাকে অনুপ্রেরণা, পরামর্শ দিয়েছেন দিপু চৌধুরী। বৃহত্তর মতলবের মানুষের কাছে তাই সবচেয়ে জনপ্রিয় নাম মায়া চৌধুরী-দিপু চৌধুরী। তাদের যুগল প্রচেষ্টায় সারা জেলার মধ্যে মতলব উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। তবে মায়া চৌধুরী গত ৫ বছরে এমপি না থাকায় এলাকার উন্নয়নের গতি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। উন্নয়নের ধারা ফিরিয়ে আনতে আবারো মায়া চৌধুরী অথবা দিপু চৌধুরীকে এমপি হিসেবে দেখতে চায় বৃহত্তর মতলবের আপামর জনসাধারণ।
মতলব পৌরসভার মেয়র ও মতলব পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আওলাদ হোসেন লিটন বলেন, বৃহত্তর মতলবের উন্নয়নে মায়া ভাইয়ের অবদান মতলববাসী আজীবন স্মরণ করবে। তিনি এই জনপদের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে যুগ যুগ ধরে কাজ করে আসছেন। মতলবের মানুষ আবারো তাকে এই জনপদের দায়িত্বে দেখতে চায়। তার সুযোগ্য উত্তরসূরি দিপু চৌধুরী মতলববাসীর সেবা করে আস্থা অর্জন করেছেন।
মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টার বলেন, মতলব আর মায়া চৌধুরী একে অপরের পরিপূরক। আমরা ধন্য স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত জাতীয় পর্যায়ের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা, খেতাবপ্রাপ্ত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বৃহত্তর মতলবের অভিভাবক। মতলবে মায়া চৌধুরীর একমাত্র বিকল্প দিপু চৌধুরী। কারণ, দিপু চৌধুরী তার বাবার সঙ্গে থেকে দীর্ঘদিন ধরে মতলবের উন্নয়নে কাজ করছেন। আমরা প্রত্যাশা করছি, মায়া ভাই অথবা দিপু চৌধুরী এই আসনে মনোনয়ন পাবেন। আমাদের দাবিও তাই।
এই আসনে আরো যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন তারা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মো. নুরুল আমিন রুহুল, মতলব উত্তর উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমএ কুদ্দুস, মতলব উত্তর উপজেলার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (এসি মিজান), জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ মঞ্জু, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এম ইসফাক আহসান সিআইপি, যুবলীগের মহিলা সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাকিয়া সুলতানা শেফালী, বাংলাদেশ কৃষক লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম (খোকা) পাটোয়ারী, রেল শ্রমিক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা, জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা অ্যাকাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. লোকমান হোসেন।
চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-মতলব দক্ষিণ) আসনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৪ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫৬ ভোট এবং নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৮ ভোট। তারাই এমপি নির্বাচিত করবেন আগামী ৭ জানুয়ারি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০২৩
এসএএইচ