ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সংসদ নির্বাচন: বিতর্কিত কর্মকর্তা-শিক্ষক ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
সংসদ নির্বাচন: বিতর্কিত কর্মকর্তা-শিক্ষক ভোটগ্রহণের দায়িত্বে নয়

ঢাকা: বিতর্কিত কোনো কর্মকর্তা বা শিক্ষককে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ না দিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একইসঙ্গে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা পদে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় কর্মরতদের নিয়োগ না দিতে বলেছে সংস্থাটি।

রোববার (২৬ নভেম্বর) ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন।

নির্দেশনা বলা হয়েছে, প্রার্থিতা চূড়ান্তকরণের পর যদি পরিলক্ষিত হয় যে, সরকারি গেজেটে প্রকাশিত কোনো ভোটকেন্দ্র কোনো প্রার্থীর মালিকানাধীন বা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাহলে নির্বাচন কমিশন যেকোনো সময়ে তা পরিবর্তন করতে পারবে। ভোটকেন্দ্রের গেজেট প্রকাশের পরেও বিষয়টি পরিলক্ষিত হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করতে হবে।  

প্যানেলভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রিটার্নিং অফিসাররা ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের কার্যক্রম চূড়ান্ত করবেন। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস/প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/কর্মচারীর মধ্য থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। বিশেষ প্রয়োজন না হলে বা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত অফিস/প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী বা শিক্ষকদের মধ্য থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ সম্ভব না হলেই কেবল বেসরকারি অফিস/প্রতিষ্ঠান থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যাবে। তবে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের জন্য যত সংখ্যক কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শিক্ষকের প্রয়োজন হবে তার চেয়ে শতকরা ১০ শতাংশ বেশি সংখ্যক কর্মকর্তা/কর্মচারী ও শিক্ষককে প্যানেলভুক্ত করতে হবে।  

যদি কোনো ব্যক্তি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চাকরিতে নিয়োজিত থাকেন অথবা অতীতে কোনো সময় নিয়োজিত ছিলেন, তবে তাকে প্রিজাইডিং অফিসার অথবা সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার অথবা পোলিং অফিসার নিয়োগ করা যাবে না। প্যানেলভুক্ত তালিকায় এ ধরনের কোনো কর্মকর্তা/কর্মচারীর নাম থাকলে তাকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। এমনকি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগদান করার পরও কাউকে এ ধরনের পাওয়া গেলে তার নিয়োগ বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া যেসব কর্মকর্তা অথবা শিক্ষক/শিক্ষিকা বিতর্কিত অথবা যাদের সম্পর্কে সংশয়/মতবিরোধ রয়েছে, সেসব কর্মকর্তা অথবা শিক্ষক/শিক্ষিকাকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্যকে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না।  

এদিকে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার নিয়োগের সময় ওইসব কর্মকর্তার কর্মক্ষমতা, দক্ষতা, সততা, সাহস এবং নিরপেক্ষতার দিকে আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা তাদের কর্মক্ষমতা, দক্ষতা, সততা, সাহস ও নিরপেক্ষতার ওপরই সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনেকাংশে নির্ভরশীল। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের সব প্রকার প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে।  

ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যে, একই ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদমর্যাদা/বেতন স্কেল যেন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার থেকে নিম্নে না হয়। অনুরূপভাবে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদমর্যাদা/বেতন স্কেল যেন পোলিং অফিসার থেকে নিম্নে না হয়। তবে ভিন্ন ভিন্ন ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তা বাধা হবে না। অর্থাৎ কোনো একটি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার অন্য কোনো ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার থেকে নিম্ন পদমর্যাদার হলেও অসামাঞ্জস্য হবে না।

এ ছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের চূড়ান্ত নিয়োগের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেসব প্রতিষ্ঠানে ভোটকেন্দ্র স্থাপিত হবে সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের যেন ওই ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়া না হয়। ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানের যেকোনো একজনকে ওই ভোটকেন্দ্রের ভোটার না হলে পোলিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে। কোনো প্রার্থী কর্তৃক কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা যাতে প্রভাবিত হতে না পারে সেজন্য প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রে যারা যে উপজেলা/থানার বাসিন্দাকে যতদূর সম্ভব যেন উক্ত উপজেলা/থানার কোনো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়া না হয়। তবে কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ করে যেসব নির্বাচনী এলাকা একটি মাত্র উপজেলা নিয়ে গঠিত, সেসব নির্বাচনী এলাকায় উক্ত নির্দেশনার আলোকে প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ সম্ভব নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসারদের নিজ উপজেলাস্থ ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়া যাবে। উল্লেখ্য যে, চাকরি বা পেশাগত কারণে অস্থায়ীভাবে কোনো এলাকায় বসবাসের ক্ষেত্রে ওই এলাকার বাসিন্দা বলে বিবেচিত হবে না।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসার যে ভোটকেন্দ্রের ভোটার সেই ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়া যাবে না এবং বিশেষ কোনো পরিস্থিতি ব্যতীত ভোটকেন্দ্র হিসেবে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের ওই ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যাবে না অথবা ভোটগ্রহণের কোনো দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।  

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, প্রিজাইডিং অফিসারসহ কোনো ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা যেন কোনো প্রার্থীর প্রভাবে প্রভাবান্বিত হতে না পারে অথবা পক্ষপাতমূলক আচরণের সুযোগ না পায় অথবা কারও বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি না হয়, সেসব বিষয় বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক প্রিজাইডিং অফিসারসহ অন্যান্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে।

ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ভোটগ্রহণের দিন, ভোটগ্রহণের আগের দিন ও পরের দিন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষ, কমন রুম, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের লক্ষ্যে উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রধান/সহকারী প্রধান ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত না হইলে প্রিজাইডিং অফিসারকে সার্বক্ষণিক সহায়তা দেওয়ার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান/সহকারী প্রধানকে নির্দেশ দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা সহকারী প্রধান উভয়েই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত হলে ওই প্রতিষ্ঠানের যে কর্মকর্তা/শিক্ষক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত হবেন না তাকে ওই দায়িত্ব দিতে হবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সব কর্মকর্তা/কর্মচারী বা শিক্ষককে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তা হলে অভিজ্ঞ ও দায়িত্বশীল কোনো চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে ভোটগ্রহণের দিনে প্রিজাইডিং অফিসারকে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে দায়িত্ব দেওয়া যাবে অথবা অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এবং ওই এলাকাধীন সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের সহায়তা গ্রহণ করতে হবে। তবে এ বিষয়ে কোনোক্রমেই কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতা বা সহায়তা গ্রহণ করা যাবে না। এ বিষয়ে ভোটগ্রহণ দিবসের কয়েক দিন আগে্ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ/প্রতিষ্ঠান প্রধানকে যথাযথ নির্দেশনা দেবেন।  

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, নারী ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণের জন্য যথা সম্ভব নারী সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং নারী পোলিং অফিসার নিয়োগ করবেন। নারী ভোটাররা যাতে স্বচ্ছন্দে ও নির্বিঘ্নে ভোট দিতে সমর্থ হন তার সুবিধার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভোটকক্ষের ব্যবস্থা করে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রতি আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।  

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।

বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০২৩
ইইউডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।