ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নয়ন-লুবনার প্রতি তোলা স্বর্ণের দাম চার হাজার টাকা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
নয়ন-লুবনার প্রতি তোলা স্বর্ণের দাম চার হাজার টাকা!

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি প্রার্থী ও বর্তমান এমপি নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

 

এ আসন থেকে তার স্ত্রী চৌধুরী রুবিনা ইয়াছমিন লুবনাও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।  

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেওয়া হলফনামায় নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন ও রুবিনা ইয়াছমিন লুবনা উল্লেখ করেছেন যে তাদের কাছে থাকা প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম চার হাজার টাকা করে।  

নয়নের নিজের স্বর্ণ রয়েছে ১০ তোলা, যার মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র ৪০ হাজার টাকা। আর নয়নের স্ত্রী লুবনার নামে রয়েছে ৫০ তোলা স্বর্ণ, যার বাজার মূল্য দেখিয়েছেন মাত্র দুই লাখ টাকা।  

যদিও প্রতি তোলা বা ভরি স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য মান ভেদে ৭৩ হাজার থেকে ১ লাখ ৮ হাজার টাকারও বেশি। সে হিসেবে প্রকৃত বাজার মূল্য থেকে আকাশ-পাতাল ব্যবধানে মূল্য দেখিয়েছেন নয়ন ও তার স্ত্রী লুবনা।  

এছাড়া লুবনার নামে জেলা শহরের ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের পাশে থাকা ৫ শতাংশ জমির ওপর নির্মিত ৫তলা বাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৩০ লাখ ১৫ হাজার টাকা।  

তাদের দুজনের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নুর উদ্দিন নয়ন তার পেশা হিসেবে আইন পেশা লিখেছেন। আর তার স্ত্রী নিজেকে একজন ব্যবসায়ী দেখিয়েছেন।  

নয়ন একজন আইনজীবী। গত আড়াই বছরে নয়নের পেশাগত আয় বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। লুবনার দৃশ্যমান কোনো আয় না থাকলেও তিনি নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে লিখেছেন ‘স্বশিক্ষিত’। ঢাকায় জমি এবং ফ্ল্যাট রয়েছে তার নামে। অন্যদিকে ব্যাংকে মোটা অংকের ঋণ আছে নয়নের।  

২০২১ সালের জুনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে উপনির্বাচন করে জয়ী হন নয়ন। সে সময় নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় নয়ন তার বাৎসরিক আয় দেখিয়েছিলেন ৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। প্রায় আড়াই বছরের ব্যবধানের পেশাগত বাৎসরিক আয় গিয়ে পৌঁছেছে ৭২ লাখ ৯১ হাজার ২৯৩ টাকায়। যদিও এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে আইন পেশায় তেমন একটা দেখা যায়নি তাকে।

অস্থাবর সম্পত্তির তালিকায় ২০২১ সালে নয়নের নগদ টাকা ছিল ১০ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৮ টাকা। ২০২৩ সালে এসে নগদ টাকা তেমন একটা বাড়েনি। এখন নগদ টাকা আছে ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮। ২০২১ সালে ব্যাংকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা থাকলেও এখন আর ব্যাংকে জমা টাকা নেই।  

২০২১ সালে কৃষিখাতে নয়নের আয় ছিল ৬ হাজার ৭৮১ টাকা এবং বাড়িভাড়া বাবদ আয় হতো ৯০ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে এসে কৃষিখাত এবং বাড়িভাড়ায় কোনো আয় নেই।  

নয়ন লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের যে ভবনটিতে বসবাস করেন, সেটি তার স্ত্রী রুবিনা ইয়াছমিন লুবনা হেবা সূত্রে মালিক। আলিশান এ বাড়ির মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৩০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। যা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।  
তার স্ত্রী লুবনা হলফনামায় ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৩৮০ টাকা। যদিও নির্দিষ্ট কোনো ব্যবসার কথা উল্লেখ নেই।  

নয়ন ২০২১ সালে তার স্ত্রীর নামে জেলা শহরের এ বাড়িটি হলফনামায় দেখিয়েছেন। হলফনামা অনুসারে তখন ঢাকায় জমি ও ফ্লাট ছিল না। এবারের হলফনামায় ঢাকার ধানমন্ডিতে দশমিক ৫৬৯ কাঠা জমিতে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যার বাজার মূল্য দেখানো হয়েছে এক কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা।  

২০২১ সালের আগে নয়নের কোনো ব্যাংক ঋণ ছিল না। পরে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। পরিশোধ করেছেন ৮ লাখ ৩৮ হাজার ২৩৩ টাকা। এখনো ঋণী আছেন ৫১ লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭ টাকার। এমপি হিসেবে বেতন দেখিয়েছেন ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ১২৫ টাকা।  

২০২১ সালে অন্যান্য খাতে নয়নের বাৎসরিক আয় ছিল ২৫ লাখ ৯৫ হাজার ৫০৯ টাকা। ২০২৩ সালে এসে অন্যান্য খাতে কোনো আয় দেখাননি। তবে স্ত্রীর নামে তিনি অন্যান্য আয় হিসেবে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ টাকা দেখিয়েছেন। আবার স্ত্রী লুবনা তার হলফনামায় একই অংকের টাকা তার নিজের নামে না দেখিয়ে ওই টাকা স্বামী নয়নের নামে ব্যবসায়ীক পূঁজি হিসেবে দেখিয়েছেন। ফলে দুজন হলফনামায় দুই রকম তথ্য দিয়েছেন।  

২০২১ সালে নয়নের ইলেট্রনিক্স সামগ্রী ছিল এক লাখ ৬২ হাজার টাকার। তার স্ত্রীর নামে ইলেকট্রনিক্স মালামাল রয়েছে ১৫ লাখ ১১ হাজার টাকার। ২০২১ সালে নয়নের আসবাবপত্র ছিল মাত্র ৫৫ হাজার টাকার। তার স্ত্রীর নামে ছিল ৮ লাখ ৯৩ হাজার টাকার। তবে ২০২৩ সালে এসে তাদের আর কারো বাড়েনি।  

নয়ন পৈত্রিক সূত্রে কৃষি জমির মালিক হয়েছেন ৫৬.৫১ শতাংশ। অকৃষি জমির মালিক হয়েছে ৪৩.১৭ শতাংশের। আইনজীবী সমিতিতে ২০০ বর্গফুটের মাত্র ৫০ হাজার টাকা মূল্যের চেম্বার রয়েছে।  

২০২১ সালে ব্যবহৃত নয়নের গাড়ির মূল্য ছিল এক কোটি তিন লাখ টাকা। ২০২৩ সালে এসে দুটি গাড়ি ব্যবহার করেন। এর একটির মূল্য ৮৩ লাখ ৯৯ হাজার ১৮৮ টাকা, অন্যটির মূল্য এক কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার ৯৫৫ টাকা।  

২০২১ সালে লুবনার নগদ টাকা ছিল ৪১ হাজার টাকা, ২০২৩ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৪০ টাকা। ব্যাংকে জমা আছে ৭ হাজার ৯৬১ টাকা।  

নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন তার হলফনামায় গত আড়াই বছরে তার সংসদীয় এলাকার অর্জনগুলো তুলে ধরেন। তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকা করণ, ২০টি ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, ৪০টি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা ভবন নির্মাণ, ৮০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছেন৷ 

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।