ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

জবরদস্তি করে সিল মারা হলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে: সিইসি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
জবরদস্তি করে সিল মারা হলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে: সিইসি

ময়মনসিংহ: ভোটের দিন কোনো কেন্দ্রে কারচুপি বা জবরদস্তি সিল মারা হলে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।  

তিনি বলেন, ভোটের দিন কারচুপি বা জবরদস্তি করে সিল মারা হলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হবে।

এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা এবার খুবই কম। তবুও সুস্পষ্টভাবে প্রশাসনকে আমরা বলেছি, যদি ওই ধরনের কোনো ঘটনা কোনো সেন্টারে ঘটে তাহলে প্রিজাইডিং অফিসার নিজেই ভোট বন্ধ করে দিতে পারবে। বিশেষ ক্ষেত্রে তিনি পারবেন না, তাকে ভোট বন্ধ করে দিতে হবে, এটাই আইনের বিধান।    
 
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর টাইনহল তারেক স্মৃতি অডিটরিয়ামে জেলার আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

সিইসি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন সুন্দর ভোট দিতে পারবে না যদি প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীতার নিয়ন-কানুন প্রতিপালন না করেন, তাহলে নির্বাচন অনিরপেক্ষ বা ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে। তাই নির্বাচন সুন্দর করতে প্রার্থীদের পরিপূর্ণ সহযোগিতা লাগবে। সেই সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের আস্থা দেওয়া হয়েছে, নিরপেক্ষ আচরণে কোনো রকম ব্যত্যয় হবে না। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোটের দিন, এ ১৫-২০ দিনে কি হলো একটা সময় গিয়ে সবাই তা ভুলে যাবে। কিন্তু ভোটের দিনের রেজাল্টটা কি হলো, পোলিংয়ে কোনো কারচুপি হলো কিনা, জবরদস্তি করে সিল মারা হলো ক-না, এটা সম্ভব হয়েছিল কিনা ? তাহলে সেটা নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে নষ্ট করবে।

এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা এবার খুবই কম। সুস্পষ্টভাবে প্রশাসনকে আমরা বলেছি, যদি ওই ধরনের কোনো ঘটনা কোনো সেন্টারে ঘটে তাহলে প্রিজাইডিং অফিসার নিজেই ভোট বন্ধ করে দিতে পারবে। বিশেষ ক্ষেত্রে তিনি পারবেন না, তাকে ভোট বন্ধ করে দিতে হবে, এটাই আইনের বিধান। রির্টানিং কর্মকর্তারা বা নির্বাচন কমিশন থেকে আমরাও যদি এ ধরনের কারচুপির ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পারি, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ওই কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এ সময় সিইসি আরও বলেন, নির্বাচনের স্বচ্ছতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভোটাররা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে আসতে পারছে কিনা, ভেতরে প্রবেশ করছেন কিনা, আবার যথা সময়ে তারা বেরিয়ে আসছে কিনা এবং বেরিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের তারা কি বলছেন, এটা দেখার বিষয়। যদি প্রায় সবাই বলে থাকে নির্বাচন আল্লাহর রহমতে ভালো হয়েছে, আমি আমার ভোট দিতে পারেছি। তাহলে ভোটের গ্রহযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। আর যদি তারা বেরিয়ে এসে বলে ভেতরে ভোট দিতে পারলাম না, আমার ভোট কেড়ে নেওয়া হয়েছে, আমি সিল মারতে পারিনি। তাহলে ভোট বন্ধ হয়ে যাবে। এসব তথ্য আপনারা (গণমাধ্যম কর্মীরা) ভালো হোক, মন্দ হোক, নিবিঘ্নে জানাবে। এটা অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। তবে তা যেন সত্য হয়। আমি সার্টিফিকেট দিয়ে স্বচ্ছতা দিতে পারব না। দিলেও জনগণ বিশ্বাস করবে না। কাজেই গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমি আমরা জানতে পারব- আসলে নির্বাচনটা নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ হয়েছে কি-না। আমি বিশ্বাস করি নির্বাচনটা অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হবে। তবে ভোট এখানে দিলে ওখানে চলে যাবে, এগুলো অবান্তর প্রচারণা। এগুলো কেউ বিশ্বাস করবেন না, এটি সত্য নয়।

এ সময় আচরনবিধি লঙ্ঘন সর্ম্পকে সাংবাদিদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, প্রার্থীরা আচরণবিধি মানছে না, এ কথাটা ঠিক নয়। আমরা শুনেছি কিছু কিছু ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। এটা নিয়ে অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। তবে এটা প্রার্থীদের খুব বিপর্যস্ত করতে পারবে না। কিন্তু ভোটের দিন যদি কারচুপি হয়, তাহলে ভোট অবাধ নিরপেক্ষ হবে না। তাই ভোট কেন্দ্রের ভেতরে কোনো রকম অন্যায় যেন না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে পোলিং এজেন্টদের। তারাই কেন্দ্রের ভেতরে ভারসাম্য সৃষ্টি করবে। কোনো ওসি. ইউএনও, এসপি ও ডিসি কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে কিছুই করতে পারবে না। আর যদি কিছু করে থাকেন তাহলে এসপি বা ডিসি যেই হোক তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মতবিনিময় সভায় ময়মনসিংহের বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম।  

এছাড়াও মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ পুলিশের রেঞ্জ ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক ও রির্টানিং কর্মকর্তা দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, এসপি মাছুম আহম্মেদ ভূঞা, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় ময়মনসিংহ জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে দুপুর সোয়া ১২টায় পর্যন্ত ময়মনসিংহ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।  

এ সভায় প্রার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের নৌকার প্রার্থী মোহিত উর রহমান শান্ত, স্বতন্ত্র প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন খান দুলু ও আমিনুল হক শামীম, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মুসা সরকার, ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরীফ হাসান অনু, ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল আসনের নৌকার প্রার্থী রুহুল আমিন মাদানীসহ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।