ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

৩০-৩৫ শতাংশ ভোটার ভোটদানে বিরত থাকতে পারে: ইএমএফ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
৩০-৩৫ শতাংশ ভোটার ভোটদানে বিরত থাকতে পারে: ইএমএফ ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) প্রশিক্ষণ কর্মশালা | ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী, সমর্থক ও নির্বাচনবিরোধী প্রচারণার কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ ভোটার আসন্ন নির্বাচনে ভোটদানে বিরত থাকতে পারে বলে মনে করছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক মোর্চা ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম (ইএমএফ)।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বরাত দিয়ে এ কথা জানান ইএমএফের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী।

জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এই কর্মশালার আয়োজন করে ইএমএফ।

কর্মশালায লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করছেন দেশ-বিদেশের পর্যবেক্ষকরা। দলীয় সরকারের অধীনে প্রভাবমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে, সেটি প্রমাণ করতে হবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে। দেশের মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পাবে। তবে নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী, সমর্থক ও নির্বাচনবিরোধী প্রচারণার কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ ভোটার ভোটদানে বিরত থাকতে পারে বলে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

ইএমএফের পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর আপনারা (পর্যবেক্ষক) কোনো দলের বিজয় মিছিলে যোগ দেবেন না। গণমাধ্যমের সামনে কেউ কোনো বক্তব্য দেবেন না। আপনারা শুধু আমাদের মনিটরিং সেলের কাছে রিপোর্ট দেবেন। শুধু ভোটকেন্দ্র নয়, কেন্দ্রের আশপাশের ৪০০ মিটার পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করবেন। কোনো অনিয়ম বা ব্যত্যয় ঘটলে সেটি আমাদের জানাবেন। কোনো দলের প্রার্থীর কাছ থেকে কোনো অর্থ নেবেন না।

পাশাপাশ দলীয় প্রার্থীর সমর্থকদের পর্যবেক্ষকের কার্ড না দিতে মোর্চায় অন্তর্ভুক্ত সংগঠন বা সংস্থার প্রতি আহ্বান জানান ইএমএফের চেয়ারম্যান।

এ সময় সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, আজকে অনেকগুলো বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানাচ্ছে। জাতীয় সংসদের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। সুতরাং, তারা (বিরোধী দল) যে কেয়ারটেকারের ধোঁয়া তুলছে, এর কোনো ভিত্তি নেই। এটা জানা সত্ত্বেও তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে। এই প্রেক্ষিতে আমরা মনে করি, আসন্ন নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই নির্বাচনের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

ইএমএফের পর্যবেক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্র এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। সুতরাং আপনাদের (পর্যবেক্ষক) ওপর যে গুরু দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে, সেটা আপনারা সঠিকভাবে পালন করবেন। নিরপেক্ষভাবে আপনারা এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ-পর্যালোচনা করবেন এবং পরবর্তীতে রিপোর্ট দেবেন। আপনাদের এই রিপোর্ট অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, একটি নির্বাচনে অনেকগুলো অংশীদার থাকে। সরকার একটি বড় অংশীদার। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, সাংবাদিক, যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন তারাও বড় অংশীদার। তবে সবচেয়ে বড় অংশীদার আমি মনে করি, আপনাদের মতো নির্বাচন পর্যবেক্ষক। আপনাদের কথাই জনগণ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে।

পর্যবেক্ষকদের নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন ভালো হয়েছে না খারাপ হয়েছে সেটা বড় কথা নয়, আপনারা আপনাদের করণীয় করে যাবেন। নির্বাচন যতই ভালো হোক, একটি পক্ষ সমলোচনা করেই যাবে, আবার নির্বাচন খারাপ হলেও একটি পক্ষ সেটিকে ভালো বলবে। কিন্তু নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। সেটা আমাদের স্বীকার করতে হবে।

ইলেকশন মনিটরিং কমিশনের পরিচালক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, সব নির্বাচনেই কিছু না কিছু ভুল-ত্রুটি হয়। এটি দেখার জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা যদি থাকে, তাহলে যারা অন্যায়-অনিয়ম করে, তারা এগুলো করার সাহস পায় না। তাই পর্যবেক্ষকদের সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্ববান হতে হবে। আপনারা (পর্যবেক্ষক) শুধু পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রতিবেদন দেবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না, যেটা আপনাদের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্নবিদ্ধ করে বা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে।

ডুয়েটের উপাচার্য ড. হাবিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে কেউ তার কাজ ঠিকমতো করছে কিনা, সেটি নিয়ে আপনারা (পর্যবেক্ষক) কিছু বলতে যাবেন না। শুধু কোনো ব্যত্যয় ঘটলে সেটি নিরাপদে থেকে পর্যবেক্ষণ করে নোট করবেন। নির্বাচন শেষে প্রতিবেদন পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশনকে যদি কোনো পরামর্শ দিতে হয় সেটি আমরা দেব।

কর্মশালার শুরুতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষদের তাদের করণীয় সম্পর্কে পাওয়া পয়েন্ট স্লাইডের মাধ্যমে অবহিত করেন বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুল ইসলাম। কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. আহমেদ আবুল কালাম আজাদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাড. জেনারেল অ্যাড. আবুল হাশেম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।