ঢাকা: নির্বাচন কমিশনার (ইসি) বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, আমরা আশ্বস্ত ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, ভোট সুন্দর হবে।
বুধবার (০৩ জানুয়ারি) নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
আজকে সেনাবাহিনী নামল, এরপর নির্বাচনী সহিংসতা কতটুকু দূর হবে বলে আপনি মনে করেন, এমন প্রশ্নে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, আমাদের যত আয়োজন সব কিন্তু শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে যেন ভোট হয়, সে পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং এটা জনগণেরও চাওয়া, যেন সেনাবাহিনী মাঠে নামে। আমরা যতগুলো সংলাপ করেছি, সেখানেও সবাই বলছেন, যেন সেনাবাহিনী মাঠে নামে। পরিবেশ যেন সুন্দর থাকে, সবাই যেন সুন্দরভাবে ভোট দিতে পারে, সেজন্যই সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। আমরা আশ্বস্ত ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ভোট সুন্দর হবে।
কারও কারও প্রার্থিতা বর্জনকে কেন্দ্র করে যে একটা আশঙ্কা রয়েছে, সেনাবাহিনী নামানোর ফলে সেটা কমবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, শুধু সেনাবাহিনী নামানোর মাধ্যমে না, আমাদের যতগুলো বাহিনী রয়েছে সবাই কিন্তু এখন অনেক সক্ষম। অনেক দিকে থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। তার সঙ্গে সেনাবাহিনী ট্যাগ হয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে বলে আমি মনে করি।
সব দল ভোটে এলে ভোট করাটা কঠিন নাকি সহজ, এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, সেটা তো আমি বলতে পারব না। এর আগে তো আমরা ভোট করিনি। এটা আমাদের প্রথম ভোট। এটা আমার প্রথম অভিজ্ঞতা কমিশনার হিসেবে ভেতরে থেকে ভোট করা। সেহেতু আমি বলতে পারব না। আগে অভিজ্ঞতা অর্জন করি, তারপরে বলতে পারব। এই মুহূর্তে এলে কী হতো, না হতো তা বলা কিন্তু এখন সত্যিই কঠিন। কারণ, আমরা তো আসলে তাদের পাচ্ছি না। পেয়ে যদি ভোট করতাম, তাহলে বুঝতে পারতাম কী হতো। তবে আমি এটা বলতে পারি, ভোট এখন যেটা হচ্ছে, সেটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণই হবে। ভোটের মাঠ ইসির নিয়ন্ত্রণে।
প্রত্যেকটা ভোট এলেই বলা হয়, একটা অগ্নিপরীক্ষা সামনে। এবার বলা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অগ্নিপরীক্ষার মুখে কমিশন দাঁড়িয়ে আছে। কেন এমনটা বলা হয়, এমন প্রশ্নের উত্তরে রাশেদা সুলতানা বলেন, ঠিক ওই সেন্সে অগ্নিপরীক্ষা না। নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় না যায়, আমরা আগেও দেখেছি, ১৯৯৬ সালে কোনো একটা অন্দোলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হয়েছিল। তারপর কিন্তু সে নির্বাচন দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি বলে অল্প দিনের ব্যবধানে কিন্তু আবারও একটা নির্বাচন হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এমন কোনো নির্বাচন করতে চাই না, যেটা আবার নতুন করে দেশকে একটা সংকটের মধ্যে ফেলে। আমরা চাই যে, একটা নির্বাচন হবে, যে সরকারই আসুক না কেন, যেন সরকার স্থায়ী রূপ নেয়। যখনই সরকার অস্থায়ী অবস্থায় চলে যায়, তখন কিন্তু দেশ একটা বিপদের মুখে চলে যায়। আমরা এটা ভাবিনি। এ সেন্স থেকেই হয়তো আমাদের মাথায় এটা আসছে, আমরা একটা ফেয়ার ইলেকশন করব।
আন্তর্জাতিক চাপ কোনো ইস্যু না, কোনো বিষয় না। কোনো দিক থেকে কোনো চাপ নেই। কিন্তু আমরা বিগত দিন থেকে আমাদের একটা অ্যাসেসমেন্ট, হয়ে যাওয়া নির্বাচনটা যেন কোনোভাবেই প্রসপন্ড (বন্ধ) না হয়ে যায়। এমন একটা ফেয়ার নির্বাচন যেন হয়, যেটা সব মহলে স্বীকৃতি পায়।
ফেয়ার নির্বাচন কাকে দেখাতে চান আপনারা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, দেশের জনগণ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব, সবাইকে আমরা দেখাতে চাই। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নাই যে, আন্তর্জাতিক বিশ্বকে আমরা মাথায় রাখছি না। এটা অবশ্যই রাখতে হবে। আমরা বিচ্ছিন্ন কোনো দেশ নয়, আমরা গোটা বিশ্বের একটা অংশ। আমরা মনে করি, এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, একটা ভালো ইলেকশন করা। জনগণকে আশ্বস্তের মধ্যে নেওয়া, যেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়। একটা ভালো ইলেকশন হলে দেশের জনগণও বলবেন যে, একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে আপনারা আর সরকার কী একই পথে হাঁটছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকারের সঙ্গে তো আমাদের কোনো লিয়াজোঁ নেই। কখনো কোনোদিন সরকারের কারও সঙ্গে কথাবার্তা বা ওঠাবসা নেই। তবে, পেপার-পত্রিকার দৃষ্টিতে, আমরা যেটুকু খবর পাচ্ছি; তাতে আমার মনে হচ্ছে, সরকারও বোধহয় চাচ্ছে একটা ফেয়ার ইলেকশন হোক। প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং ওবায়দুল কাদের সাহেব বা বিভিন্ন মন্ত্রীরা যেভাবে বলছেন, তাতে আমাদের মনে হচ্ছে, তারাও একটা ফেয়ার ইলেকশন চাচ্ছেন।
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২৪
ইইউডি/এএটি