ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

অর্ধেকের বেশি দল আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়নি, আবেদন সময় বাড়ানোর

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
অর্ধেকের বেশি দল আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়নি, আবেদন সময় বাড়ানোর

ঢাকা: বিগত পঞ্জিকা বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। এতে অর্ধেকের বেশি দল হিসাব জমা দেয়নি।

বরং সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করছে।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধিত দলগুলোকে বিগত বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪টি।

জানা গেছে, শেষ সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ২১টি দল হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছে। আর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণফ্রন্ট, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ ২৩টি দল সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দলগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আগেও সময় বাড়ানো হয়েছিল৷ এবারও ২৩টি দল সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। কমিশনের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। সিদ্ধান্ত হলে সেটা দলগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই। তবে আবেদনগুলোর বিষয়ে কমিশনের কাছে সিদ্ধান্ত চেয়ে নথি উপস্থাপন করা হবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যেসব হিসাব জমা দিয়েছে-
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা, এলডিপি, গণতন্ত্রী পার্টি, ইসলামি ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় পার্টি (জেপি), এনপিপি, জাকের পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট।

৩০ দিন থেকে দুই মাস সময় চেয়েছে যে ২৩ দল-
জাসদ, গণফ্রন্ট, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ন্যাপ, বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী পরপর তিন বছর কোনো দল আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে নিবন্ধন বাতিল হবে।

জানা গেছে, ২০২৩ পঞ্জিকা বছরে আওয়ামী লীগের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১৬ কোটি ৪৩ লাখ ৯ হাজার ২৩২ টাকা বেশি। একই বছর দলটি ব্যয়ও বেড়েছে, আগের চেয়ে যা  দুই কোটি ৫১ হাজার ৪২১ টাকা বেশি।

২০২৩ সালে জানুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের ব্যাংকে ৭৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা জমা ছিল। এ বছর আয় হয়েছে ২৭ কোটি ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। মাসিক চাঁদা, সদস্যরা চাঁদা দেন। যার পরিমাণ এক কোটি ৬৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। অনুদান প্রাপ্তি (মেঘনা ব্যাংক পিএলসি) এক কোটি এক লাখ  টাকা। নমিনেশন ফরম বিক্রয় (৩৩৬৫ জন) ১৬ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফরম বিক্রয় (অন্যান্য) দুই কোটি ২৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ভাড়া (২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ) ১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা৷ ব্যাংক সুদ চার কোটি ৮৪ লাখ ৪১ হাজার টাকা। অন্যান্য (উত্তরণ, বিদ্যুৎ বিল) ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এতে মোট ২৭ কোটি ১৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আয় করেছে। আর নয় কোটি ৮৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা দলটির ব্যয় হয়েছে।

এদিকে টানা তিন বছর ধরে ঘাটতিতে থাকার পর গত বছর লাভের মুখ দেখলেও এবার ফের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি)। এতে দলটির ক্ষতি হয়েছে দুই কোটি ৫৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮১৯ টাকা।

২০২৩ পঞ্জিকা বছরে দলটির আয় হয়েছে এক কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ১৫১ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৭০ টাকা। অফিস খরচ, স্টাফদের বেতন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, পোস্টার লিফলেট, ইফতার আয়োজন ও দলীয় নেতাকর্মী গুম খুন পরিবারদেরকে আর্থিক সহযোগিতা বাবদ খরচ এ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর ক্ষতি হয়েছে দুই কোটি ৫৪ লাখ ৪৩ হাজার ৮১৯ টাকা।

অন্যদিকে আগের বছরের তুলনায় জাতীয় পার্টির আয় ও ব্যয় কিছুটা কমেছে৷ তবে তহবিল আগে চেয়ে বেড়েছে। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া দলটির ২০২৩ পঞ্জিকা বছরের বিবরণী বলছে, জাপা আয় করেছে দুই কোটি ২২ লাখ দুই হাজার ৪০৫ টাকা। আর ব্যয় করেছে এক কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৫২৫ টাকা। জাপার ব্যাংকে আগের স্থিতি ছিল এক কোটি ৭৭ হাজার ৪২৬ টাকা। বর্তমানে তহবিল হচ্ছে দুই কোটি নয় লাখ ৬১ হাজার ৩০৬ টাকা।

২০২২ পঞ্জিকা বছরে দলটির আয় হয়েছিল দুই কোটি ২৯ লাখ ১৪ হাজার ৯৬৮ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল এক কোটি ২৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪২ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
ইইউডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।