ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে রাখতে সফল হয়েছি। এতো দ্রুত আর কোনো কিছুতে সফল হয়েছি কি-না, আমার জানা নেই।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত পিঠা উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার জন্য ২০২৩ সালে পাস হওয়া আইন বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। ওই আইন বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া চিঠি অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকবে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, অসৎ উদ্দেশে এনআইডি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে নেওয়া হচ্ছিল। আমরা দ্রুত এটা বাতিল করতে সফল হয়েছি। এতো দ্রুত আর কোনো কিছুতে সফল হয়েছি কি-না, আমার জানা নেই।
তিনি বলেন, আমি সরকারকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই যে অতি দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন দিয়েছে। বুধবার আমরা চিঠি পাঠিয়েছিলাম, আজ (বৃহস্পতিবার) এটা পাস হয়েছে।
সিইসি আরও বলেন, যখন জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়, তখন আমি গণমাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছিলাম। দেশের একজন সিনিয়র নাগরিক হিসেবে তখনই আমি মনে করেছিলাম, কোনো মহৎ উদ্দেশে এটা নেওয়া হচ্ছে না। আমি সিইসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দু-একজনের সঙ্গে আলাপে বলেছিলাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে হবে। এজন্য যা যা করার আমি করব। সেজন্য ওই আইন বাতিল করতে চিঠি দিয়েছি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিজ্ঞজনেরা সবদিক বিবেচনা করে সুপারিশ করেছেন। আমরা সুপারিশ পর্যালোচনা করার পর প্রতিক্রিয়া জানাব। যারা রিপোর্ট বানিয়েছেন তারা বিজ্ঞজন। ওনারা ভ্যালুয়েবল রিপোর্ট তৈরি করেছেন। অনেক কষ্ট করে রিপোর্ট করেছেন। সুপারিশগুলো কিন্তু ষোলয়ানা বাস্তবায়ন নাও হতে পারে। তবে ইসিকে শক্তিশালী করতে যতোগুলো সুপারিশ থাকবে, সবগুলোর পক্ষে আমরা।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সুপারিশ নিয়ে যেসব প্রতিক্রিয়া পেয়েছি তা ইতিবাচক। নির্বাচন কমিশনও এটা ভালোভাবে নিয়েছে। তবে সবাই যা চাই তা নাও হতে পারে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে এটা করেছি। অতীতের মতো আমরা কোনো কিছুর পুনরাবৃত্তি চাই না। আমরা এমনভাবে সুপারিশ করেছি, যাতে করে কোনো গণহত্যাকারী ও দুর্নীতিবাজ নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে।
তিনি বলেন, যারা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে অন্যায় করেছে, খুন করেছে, গুম করেছে, তারা যেন নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে। আমরা সুপারিশ করেছি ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে নির্বাচন বাতিল হবে। অনেকে এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। কেউ কেউ ৫০ শতাংশ করার কথা বলেছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে ভোটের হার অনেক বেশি হওয়া সম্ভব।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সামনের দিনে নির্বাচন কমিশন যেন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে সেজন্য আইনি কাঠামো তৈরি এবং অতীতের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য দায়বদ্ধতার সুপারিশ করেছি। সংস্কার কমিশনের জরিপে দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ মানুষ জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতামত দিয়েছেন। নির্বাচন দুর্নীতিমুক্ত রাখতে দুর্বৃত্তরা ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরা যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আরএফইডির সভাপতি একরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি কর্মকর্তা ও সংগঠনটির নেতৃবৃন্দসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৫
ইইউডি/এসআই