ঢাকা: বিদ্যমান ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করতে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য চলমান হালনাগাদ কর্মসূচিতে কর্মকর্তাদের বিষয়টির প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সংস্থাটি।
ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটার তালিকাকে অনেকেই বিতর্কিত বলে আখ্যা দেওয়ায় কমিশন এর পেছনে যে কারণগুলো চিহ্নিত করেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মৃত ভোটার তালিকায় থেকে যাওয়া। তাই চলমান হালনাগাদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন নিজেই বিষয়টি প্রতি দায়িত্বশীল হতে মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয় এজন্য জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধকদের নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সনদ সরবরাহ ও সংশোধনের নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
এক লিখিত নির্দেশনায় সিইসি মাঠ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ভোটার তালিকা ত্রুটিমুক্ত করার প্রয়াসে মৃত ভোটারের নাম কর্তনের কাজটি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে।
এদিকে দায়িত্ব পালনে কোনো অনিয়ম হলে বা ভুল বা মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে তালিকা হালনাগাদ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেও দায় নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংস্থাটি।
নির্বাচন কমিশনার ব্রি.জে. (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ হালনাগাদ কার্যক্রম নিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন টকশোতে বলা হচ্ছে ভোটার তালিকা সঠিক নয়। আমাদের সাধারণ মানুষদের মাঝেও এ ধরনের একটা পার্সেপশন আছে।
তিনি বলেন, এ কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে একটা শুদ্ধ ভোটার তালিকা ছাড়া কনফিডেন্ট মনে করছি না। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করা। আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, ভোটার তালিকায় যে বিতর্ক বলছি, আমরা শুদ্ধতার অভাব বলছি, এটা মূলত তিনটা কারণে হচ্ছে। প্রথম কারণ, মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ না পড়া। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, দ্বৈত ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার
সম্ভাবনা। আর তৃতীয়ত হলো, বিদেশি নাগরিক প্রতারণার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হয়েছে কি না।
গত ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়িবাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ করছে ইসি। ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলবে। এরপর ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি গ্রহণের কাজ, যা চলবে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত। এই কাজে ৬৫ হাজার লোকবল দিয়েছে সংস্থাটি। তারা ১ দশমিক ৫২ শতাংশ নাগরিককে ভোটার তালিকায় যুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করবেন।
অন্যদিকে ২০২২ সালে নেওয়া তিন বছরের তথ্যের শেষ ধাপের হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে ১৮ লাখের মতো ভোটার আগামী মার্চে যোগ হতে পারে। সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। বাড়ি বাড়ি হালনাগাদে ১৯ লাখ নতুন ভোটার তালিকায় যোগ হতে পারে।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে ছয়বার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল, ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২০২৩ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ইসি।
ভোটার তালিকা হালানাগাদে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যেসব কাগজপত্র তথ্য সংগ্রহকারীদের দিতে হবে:
ক) ১৭ ডিজিটের অনলাইন জন্মসনদের কপি
খ) জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের কপি
গ) নিকট আত্মীয়ের এনআইডির ফটোকপি (পিতা-মাতা, ভাই-বোন প্রভৃতি)
ঘ) এসএসসি/দাখিল/সমমান, অষ্টম শ্রেণি পাশের সনদের কপি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
ঙ) ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি/চৌকিদারি রশিদের ফটোকপি)
ভোটার হওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে:
ক) নিজের নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদের সাথে হুবহু মিলিয়ে লিখতে হবে
খ) জন্ম তারিখ অবশ্যই জন্ম নিবন্ধন বা শিক্ষা সনদ অনুযায়ী হতে হবে
গ) স্থায়ী ঠিকানা লেখার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভোটারের প্রকৃতস্থায়ী ঠিকানা লিখতে হবে
ঘ) কোনো অবস্থাতেই দ্বৈত বা দুইবার ভোটার হওয়া যাবে না।
এক সতর্কবার্তায় ইসি জানিয়েছে, একাধিকবার ভোটার হওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ একাধিকবার ভোটার হলে আঙুলের ছাপ পরীক্ষার মাধ্যমে তা সহজেই শনাক্ত করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২৫
ইইউডি/এমজেএফ