রাজশাহী: অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের ঘোষণা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজশাহীতে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশ নেন।
তিনি বলেন, এ কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেছে সত্যিকার অর্থে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, উৎসবমুখর ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। যেসব কারণে জুলাই-আগস্টের অবতারণা হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল ভোটের অধিকার হারিয়ে যাওয়া। বর্তমান কমিশন একটি ভঙ্গুর নির্বাচনব্যবস্থার মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। অপরপাশে রয়েছে সন্তানদের রক্ত। কাজেই একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এ কমিশন দায়বদ্ধ।
এর আগে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সুপারভাইজারদের সঙ্গে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় যোগ দেন এবং প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।
এ সময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরও এতদিন যারা ভোট দিতে পারেননি তারাও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। কাজেই কোনো নাগরিক উপযুক্ত হওয়ার পরও ঐচ্ছিক কাগজপত্র বা সামান্য জটিলতার কারণে যেন ভোটার হওয়া থেকে বঞ্চিত না হন, সে বিষয়ে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর অথবা ২০২৬ সালের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে আমরা একটা ধারণা পাই, তিনি বলেছেন, ‘সংস্কার কার্যক্রম যদি সংক্ষিপ্ত আকারে করতে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সেই পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে আগামী ডিসেম্বর। আর সংস্কার কার্যক্রম যদি আরেকটু দীর্ঘ করতে দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে ২০২৬ সালের জুনে নির্বাচন করা সম্ভব। ’
এক প্রশ্নে ইসি বলেন, বিগত সময়ে ১৮ থেকে ২৪ লাখ মৃত মানুষ ভুয়া ভোটার তালিকায় ছিল। সেই ক্ষেত্রে ১৮ থেকে ২৪ লাখ মৃত মানুষ ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে।
তিনি বলেন, পর্দার বিষয় নিয়েও অনেক নারী ছবি তুলে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে চায় না। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতায় ছবি ছাড়া ভোটার নিবন্ধনের সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে ইসলামিক স্কলাররা অবশ্যই জাতীয় প্রয়োজনে ছবি তোলার পক্ষেয় কথা বলবেন। কারণ ছবি ছাড়া ভোটার নিবন্ধন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে পারে।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে এক প্রশ্নে ইসি বলেন, স্থানীয় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নেয় না। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজন করা। আমাদের অতিরিক্ত দায়িত্বের অংশ হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তথা সরকার যখন সিদ্ধান্ত নেয় তখন আমরা সেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করে দিই। সুতরাং স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে কি হবে না, কবে হবে, এটা সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে। যখন সিদ্ধান্ত নিবে তখন আমরা জানতে পারবো।
বিগত বিতর্কিত নির্বাচনের সময় দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ব্যাপারে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আমরা যারা বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছি আমরাও আইনের ঊর্ধ্বে নই। তাই কেউ যদি নিজে সুপরিকল্পিতভাবে এবং নিজে সংশ্লিষ্ট থেকে কোনো অপরাধ করে থাকে তাকে আইন আদালতের সামনে যেতে হতেই পারে। এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয় নয়, আইন এবং আদালতের বিষয়।
রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার ও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫
এসএস/জেএইচ