ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধনে যাতায়াত ব্যয় ৬ লাখ টাকা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
স্মার্টকার্ড বিতরণ উদ্বোধনে যাতায়াত ব্যয় ৬ লাখ টাকা! স্মার্টকার্ড।

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) দায়িত্বে থাকাবস্থায় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নিজে আবারও এ কর্মসূচি ‘উদ্বোধন’ করেছেন। আর এতে কেবল যাতায়াত ভাড়া বাবদই ব্যয় করেছেন ৬ লাখ টাকা।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, সিইসি যে কোনো কার্যক্রম উদ্বোধন করতেই পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একবার উদ্বোধনের পর আর সেটার দরকার হয় না।

এছাড়া একই কাজ করে তিনি রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ও করেছেন।
 
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। সেদিন জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের মাঝে এই কার্ড বিতরণ করেন তিনি।
 
এরপর ৩ অক্টোবর থেকে সারাদেশে এই কার্ড বিতরণের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়। এক্ষেত্রে রাজধানীর উত্তরা থানা, রমনা থানা এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার দাসিয়ারছড়ায় এই কার্ড বিতরণ করা হয়। আর সে সময় দায়িত্বে থাকা সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন কুড়িগ্রামে গিয়ে এই কর্মসূচি ‘উদ্বোধন’ করেন।
 
জানা গেছে, কুড়িগ্রামে তারা বিমান বাহিনীর স্পেশাল ফ্লাইট ব্যবহার করেছিলেন। এজন্য ব্যয় হয়েছে ৬  লাখ ২০ হাজার ৬৭৭ টাকা।
 
স্মার্টকার্ডের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নেওয়া আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস-আইডিইএ প্রকল্প থেকে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন কর্মসূচির ব্যয় নির্বাহ করা হয়। রকিব কমিশনের উদ্বোধন কর্মসূচির ব্যয়ও এই প্রকল্প থেকে দেওয়ার জন্য বর্তমান সিইসি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু আইডিইএ প্রকল্প সে ব্যয় বহন করেনি। পরবর্তীতে ভোটার তালিকা প্রণয়ন তহবিল থেকে এই অর্থ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়।
 
সম্প্রতি বিমান বাহিনীর অনুকূলে ভাড়া পরিশোধের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের হিসাব শাখার একজন সিনিয়র সহকারী সচিবের অনকূলে এই অর্থ বরাদ্দও দেয় কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন।
 
ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি মঞ্জুরির আদেশ জারির পর তা প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে অবহিত করে চিঠিও দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ইসির উপ-সচিব শাহেদুন্নবী চৌধুরী।
 
২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর কুড়িগ্রাম গিয়েছিলেন সিইসি রকিবউদ্দীনসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা। সে সময় নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন- মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, মোহাম্মদ আবু হাফিজ, মো. শাহ নেওয়াজ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাবেদ আলী।
 
আবু হাফিজের বাড়ি কুড়িগ্রামে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির উপ-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার বাইরে তাঁর কারণেই কুড়িগ্রামে প্রথম স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হয়েছিল। মূলত এটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর আবারও উদ্বোধনের মতো বিষয়।
 
রকিব কমিশন স্মার্টকার্ড নিয়ে বেশ কয়েকবার বিদেশ ভ্রমণও করেছেন। কিন্তু তেমন কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই হুট করে উন্নতমানের এই জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণে যায়। ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ে এ কার্যক্রম। আইডিইএ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ডিসেম্বরে। এই প্রকল্পের অধীনে তারা স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করে দিতে কাজ দিয়েছিলেন ফ্রান্সের অবার্থার টেকনোলজিজ নামে এক প্রতিষ্ঠানকে। যে প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসের মধ্যে ৯ কোটি স্মার্টকার্ড তৈরি করে দেবে বলে রকিব কমিশন চুক্তি করেছিলেন। আর এ কমিশনের মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু যাওয়ার আগে তারা ফরাসি ওই কোম্পানির কাছ থেকে সব কার্ড বুঝে নিতে পারেননি। ফলে এখনো শেষ হয়নি এই কার্ড ছাপানোর কাজ। যে কারণে এক বছরেও বিতরণ হয়নি এক নবমাংশ স্মার্টকার্ড।
 
নূরুল হুদা কমিশন গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর অবার্থারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। একইসঙ্গে নিজেরাই উৎপাদন করছে স্মার্টকার্ড।
 
এদিকে রকিব কমিশন যাওয়ার কিছুদিন আগে সিদ্ধান্ত নেয়, স্মার্টকার্ড বিতরণের সময় নাগরিকের দশ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি নেবে। কিন্তু এসব নেওয়ার জন্য স্ক্যানার মেশিনও তারা কিনে দিতে পারেনি। বর্তমানে স্মার্টকার্ড বিতরণে এটিও বড় বাধা। এ অবস্থায় নূরুল হুদা কমিশন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে এক সেট করে মেশিন স্থানীয়ভাবে কেনার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আপাদকালীন কাজ সে মেশিনগুলো দিয়েই চালিয়ে নেওয়া হবে।
 
রকিব কমিশন দুইবার টেন্ডার দিলেও ত্রুটির কারণে মামলায় পড়ে সে প্রক্রিয়া আর শেষ করতে পারেনি। তবে বর্তমানে মামলা জনিত জটিলতা উঠে যাওয়ায় আবারও টেন্ডারের মাধ্যমে ওই মেশিন কেনার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিচ্ছে নূরুল হুদা কমিশন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৭
ইইউডি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।