ভোটারদের জল্পনা-কল্পনা এবং হিসাব-নিকাশ জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে নিয়ে থাকলেও নীরব ভোটাররা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারে। নতুন ভোটাররাও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ব্যালটের মাধ্যমে সুখবরটি এনে দিতে পারেন! কারণ, সচেতন এবং তরুণ ভোটাররা রংপুরের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় চান।
২০১২ সালের প্রথম নির্বাচনে সাড়ে তিন লাখ ভোটের মধ্যে এক লাখের বেশি ভোট নিয়ে নগর পিতার আসনে বসেছিলেন ঝন্টু। সেই ঝন্টু রংপুরের উন্নয়নে কাজও করেছেন চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে সড়ক প্রশস্ত ও ডিভাইডার বসিয়ে যান চলাচল অনেকটা সহজ করেছেন। সড়কের পাশের ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল এবং ফুটপাতকে হাঁটার উপযোগী করেছেন ঝন্টু। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলের এই প্রার্থী শহরের বিভিন্ন স্থানে ওয়াইফাই দিয়ে করেছেন ইন্টারনেটের ব্যবস্থা।
এসব কারণে তরুণ এবং সচেতন ভোটাররা ঝন্টুর প্রতিই আস্থা রেখেছেন। আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভোটব্যাংকের পাশাপাশি এসব ভোটার বাড়তি হিসেবে যোগ হবে ঝন্টুর ভোটের থলিতে।
গেলবার নির্বাচনে এক লাখ ছয় হাজার ২৫৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন ঝন্টু। তার নিকটতম প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট পেয়েছিলেন। আরেক প্রার্থী আব্দুর রঊফ মানিক পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ২০৮ ভোট। জাতীয় পার্টির ভোট ভাগাভাগিতে সেই সময়েও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতে গিয়েছিলেন ভোটে।
চলমান নির্বাচনী ডামাডোলের মধ্যে এবারও ভোটাররা বিশ্লেষণ করে হিসাব-নিকাশ কষছেন ঝন্টুকে নিয়ে। জাতীয় পার্টির ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান গতবার তার হিসাবের নির্দিষ্ট ভোট পেলেও একই দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। যদিও তাকে এরশাদ বহিষ্কার করেছেন। তবে গতবারের জাতীয় পার্টির হিসাব-নিকাশের মতো এবারও একটা ধাক্কা লাগতে পারে এরশাদ সমর্থিত প্রার্থী মোস্তফার ভোটের ফলে।
নগরে জাতীয় পার্টিরই ভোট রয়েছে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি। সেই ভোটে বিভক্তিও জাতীয় পার্টির জন্য নেতিবাচক ফল আনতে পারে।
এবার প্রায় চার লাখের কাছাকাছি ভোটে বড় বড় তিন দলসহ অন্যান্য প্রার্থীরও ভোট বেড়েছে। গতবছরের হিসাবে আওয়ামী লীগ কিংবা ঝন্টুর লাখের বেশি ভোট যদি নড়চড় না হয় তাহলে তা আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর থলিতেই জমা হবে?
আর এবার নতুন ভোটারের মধ্যে ২৫-৩০ হাজার ভোটারকে টার্গেট করেছেন ঝন্টু। তরুণ ভোটাররা সচেতন, তারা চান উন্নয়ন- এসব ভোটারের মনোভাবকে পুঁজি করে এগাচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।
নগরে বলাবলি শুরু হয়েছে-ঝন্টু হেরে গেলে রংপুরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করলে নগরের উন্নয়নে অর্থ আসবে না। এসব কথা বিবেচনা করছেন ভোটাররাও।
গতবছর বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন মাত্র ২১ হাজার ২৩৫ ভোট। মোট ভোট বেড়ে যাওয়ায় তার থলিতে বাড়তি কিছু ভোট যোগ হবে। বিএনপি এবং জামায়াতের ভোটগুলো যে ঝণ্টু পাবেন সে বিষয়ে নগরে জোর আলোচনা। তবে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অনেকের মামলা থাকায় তাদের অধিকাংশই ভোট দিতে আসবেন না। আর সেক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াতের মোট ভোটব্যাংক থেকে কিছু ঘাটতি থেকেই যায় বলে মনে করেন ভোটাররা।
এবার মেয়র পদে সাতজন ছাড়াও ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ২১১ জন এবং ১১টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মোট ভোটার তিন লাখ ৯৩ হাজার ৮৯৪ জন।
মোট সাত প্রার্থীর মধ্যে তিন জন প্রার্থী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট টেনে নেবেন। কাস্ট হওয়া মোট ভোটের মধ্যে বাকি ৫০-৬০ হাজার ভোট পাবেন বাকি চার প্রার্থী!
গত কয়েক দিনে সাধারণ ভোটারদের প্রকাশ্য আলোচনা জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তফাকে নিয়ে হলেও আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকের ভোটার, তরুণ ও সচেতন ভোটার এবং নগরে থাকা নীরব ভোটাররা একটি চমক দেখাতে পারেন ২১ ডিসেম্বর!
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর
এমআইএইচ/জেডএম